১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার
১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাশিয়ার তরুণদের ঝুঁকিতে ফেলছে সস্তা ওজন কমানোর পিল

শেয়ার করুন

রাশিয়ার তরুণদের মধ্যে দ্রুত ওজন কমানোর আশায় একটি সস্তা পিল দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এই ওষুধের ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, পিলটির আকর্ষণ মূলত এর কম দাম ও দ্রুত ফল দেখানোর প্রতিশ্রুতিতে। অনেক তরুণ-তরুণী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একে ‘মিরাকল সল্যুশন’ হিসেবে প্রচার করছে। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে, এই ওষুধে থাকা কিছু উপাদান শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে এবং মানসিক অবস্থার ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে।

সেন্ট পিটার্সবার্গের ২২ বছর বয়সী মারিয়া এমনই এক ভুক্তভোগী। অনলাইনে জনপ্রিয় এক বিক্রেতার কাছ থেকে ট্যাবলেট কিনে তিনি দিনে দুটি করে খেতে শুরু করেন। মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই তার ওজন কিছুটা কমলেও শুরু হয় ভয়ানক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
‘খেতে ইচ্ছে করত না, পানি পান করতেও না। সবসময় নার্ভাস লাগত, ঠোঁট কামড়াতাম, গাল চিবোতাম,’ বলেন মারিয়া। ধীরে ধীরে তিনি তীব্র উদ্বেগ, মানসিক চাপ ও নেতিবাচক চিন্তায় ভুগতে শুরু করেন।

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এ ধরনের পিল সাধারণত বিপজ্জনক রাসায়নিক উপাদানে তৈরি হয় যা শরীরের স্নায়ুতন্ত্রে সরাসরি প্রভাব ফেলে। এতে ব্যবহারকারীদের চোখের মণি বড় হয়ে যাওয়া, হাত কাঁপা, ঘুম না হওয়া, এমনকি বিষণ্নতা ও হ্যালুসিনেশন পর্যন্ত হতে পারে।

রাশিয়ার বিভিন্ন শহরে ইতোমধ্যে এ ধরনের ওষুধ সেবনের কারণে অন্তত তিনজন স্কুলশিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করার ঘটনা ঘটেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই পিলগুলো অনুমোদনহীন এবং অনলাইন বা অবৈধ ফার্মেসি থেকে সহজে পাওয়া যায়।

সেন্ট পিটার্সবার্গ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির পুষ্টিবিদ ড. ইরিনা কোজলোভা বলেন, “যেকোনো ওজন কমানোর প্রক্রিয়া ধীরে ও নিয়মিত হতে হয়। দ্রুত ফলের আশায় রাসায়নিক পিল খেলে তা শরীরের জন্য বিষ হয়ে দাঁড়ায়। এতে শুধু ওজন নয়, মানসিক ভারসাম্যও নষ্ট হয়।”

বিশেষজ্ঞরা তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন—ওজন কমানোর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো পিল ব্যবহার না করতে। তারা আরও বলেন, সুষম খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম ও নিয়মিত ব্যায়ামই নিরাপদ উপায়ে ওজন নিয়ন্ত্রণের একমাত্র কার্যকর পথ।

সামাজিক মাধ্যমে পিলটির ব্যাপক প্রচার ঠেকাতে রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে এরই মধ্যে অনেক তরুণ এই বিপজ্জনক ফাঁদে পা দিয়েছেন, যেখান থেকে বেরিয়ে আসতে তাদের দীর্ঘ চিকিৎসা ও মানসিক সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে।

সিএনআই/২৫

শেয়ার করুন