
মাহিব মোস্তাকিম (ঢাকা কলেজ)
চীনে ড্রোন দিয়ে খাবার পৌছানো।শুনতে অবিশ্বাস হলেও এটাই বাস্তবতা চীনের শহরে। ধরুন আপনি রাস্তায় হাঁটছেন বা কোথাও যাচ্ছেন, হঠাৎ প্রচণ্ড ক্ষুধা লাগলো। আশেপাশে কোনো খাবারের দোকান নেই। এই মুহূর্তে যদি আপনি চীনের কোনো শহরে থাকেন, তাহলে সমাধান একদম হাতের কাছেই। শুধু আপনার স্মার্টফোনে থাকতে হবে “Meithon” নামের একটি অ্যাপ।
এই অ্যাপের মাধ্যমে আপনি যেকোনো জায়গা থেকে খাবারের অর্ডার করতে পারবেন, আর মাত্র ৫–৬ মিনিটের মধ্যেই ড্রোনে করে সেই খাবার পৌঁছে যাবে আপনার হাতে! একবার শুধু চিন্তা করুন, আপনার চারপাশে যখন এমন উন্নত প্রযুক্তির স্মার্ট ডেলিভারি সিস্টেম গড়ে উঠছে, তখন এটি শুধু প্রযুক্তি নয় — এক কথায় এটি বিপ্লব।
চীন আজ প্রযুক্তির এমন এক স্তরে পৌঁছেছে, যা আমাদের কল্পনারও বাইরে। সেখানে শুধু ড্রোনে খাবার পাঠানো নই, রোবটিকস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), স্মার্ট ডিভাইস, এবং উন্নত প্রযুক্তি সংযোগ — সবই সেই দেশের সাধারণ মানুষের কাছে দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে।
চীনের এই ক্ষেত্তে অবিস্মরণীয় সাফল্য হিসেবে ধরা যেতে পারে, “Hisense” নামক ব্র্যান্ডকে ।
Hisense শুধু ইলেকট্রনিক পণ্যের নির্মাতা নয়, তারা বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন টুর্নামেন্টে তারা আয়োজক বা স্পন্সর হিসেবে যুক্ত হয়, যা তাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু এবং গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দেয়। এভাবেই তারা অন্যান্য ব্র্যান্ডকে ডমিনেট করছে, যেমন ওয়াল বা অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান।
Hisense-এর অন্যতম চমকপ্রদ উদ্ভাবন হলো বিশাল আকৃতির টেলিভিশন। তারা এমনকি ১০০ ইঞ্চির টিভিও তৈরি করেছে। অথচ, টেলিভিশনের ইতিহাস শুরু হয়েছিল মাত্র ৩ ইঞ্চি স্ক্রিন দিয়ে — ১৯২৮ সালে। এক শতাব্দীর ব্যবধানে প্রযুক্তির এই উন্নয়ন আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ে, সময়ের সঙ্গে চলতে হলে সময়ের হাওয়া কোনদিকে প্রবাহিত হয় তা ধরতে হবে।
Hisense এইক্ষেত্তে সবসময় রপ্তানিনির্ভর উৎপাদনে বিশ্বাস করে এসেছে। তারা বিশ্বমানের কোয়ালিটি নিশ্চিত করেও তুলনামূলক কম দামে পণ্য সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছে। আর এ কারণেই ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে এই ব্র্যান্ডের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
এই প্রবণতা শুধু Hisense-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। চীনের অন্যান্য প্রযুক্তি ব্র্যান্ড যেমন Huawei, Xiaomi, DJI, BYD ইত্যাদি বিশ্বমঞ্চে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে। DJI আজ ড্রোন শিল্পে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছে, Xiaomi স্মার্টফোন শিল্পে এক বড় নাম, আর BYD বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনে Tesla-র সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে।
চীন তাদের প্রযুক্তি, মান, ও ইনোভেশনের মাধ্যমে শুধু নিজেদের দেশকে নয়, পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। আজ চীনের পণ্য মানেই শুধু সস্তা নয়, বরং মানসম্মত ও ভবিষ্যতবান্ধব। ভবিষ্যতে প্রযুক্তির দুনিয়ায় চীন আরও বড় ভূমিকা রাখবে — এটা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির অগ্রগতি এমন এক স্তরে পৌঁছেছে, যেখানে প্রতিদিনের জীবনধারা বদলে যাচ্ছে চোখের পলকে। প্রযুক্তি এখন আর শুধু বিলাসিতা নয়—এটি হয়ে উঠেছে জীবনের অপরিহার্য অংশ। এই অভাবনীয় পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিচ্ছে চীন। তাদের প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং দ্রুত বাস্তবায়ন বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাছে এক বিশাল উদাহরণ হয়ে উঠেছে।
চীন আজ বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে—প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়ার জন্য শুধু অর্থ নয়, প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গি, গবেষণা ও পরিকল্পিত প্রয়োগ। তারা তাদের শিক্ষাব্যবস্থা, গবেষণাগার, সরকারি পলিসি—সবকিছু প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি করেছে এক টেকসই কাঠামো।
পরিশেষে বলা যায়, চীনের এই প্রযুক্তিগত অগ্রগতি কেবল নিজেদের উন্নয়নের জন্য নয়, এটি বিশ্ববাজারকে নতুন দিগন্ত দেখাচ্ছে। ভবিষ্যতের প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে চীন যে কত বড় ভূমিকা রাখবে—এতে কোনো সন্দেহ নেই। আজ যা কল্পনা, আগামীকাল সেটিই বাস্তব হয়ে উঠছে চীনের হাতে।সুতরাং, তৃতীয় বিশ্বের দেশ বাংলাদেশকেও যদি গবেষণাগার,পরিকল্পিত প্রয়োগ, উন্নত শিক্ষাব্যবস্থার হাতেখড়ির শুরু হয়, তাহলে আমূল পরিবর্তন হয়ে অর্থনৈতিক মন্দা কলোনিয়াল অবস্থান থেকে মাথা উঁচু করে দাড়াবে।
সিএনআই/২৫