১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার
১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্টারলিংকের কার্যক্রমে অস্বচ্ছতা, বিটিআরসি স্পষ্টীকরণ চান

শেয়ার করুন

ব্যবসা শুরু করেও বাংলাদেশে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট প্রদানকারী স্টারলিংকের কার্যক্রমে নানা অসংগতি, কারিগরি ত্রুটি ও তথ্য-ঘাটতি পেয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় প্রতিষ্ঠানটির অফিস, গ্রাহকসংখ্যা, গেটওয়ে স্থাপন, মনিটরিং টুল ও বিদেশি গ্রাহক সেবা প্রদানের বিষয়ে উদ্বেগ উত্থাপিত হয় এবং স্টারলিংকের কাছে স্পষ্টীকরণ চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিটিআরসির প্রতিনিধি ৭ সেপ্টেম্বর করওয়ান বাজারের নিবন্ধিত ঠিকানায় গিয়ে দেখেছেন— সেখানে দাপ্তরিক বা অপারেশনাল কোনো কার্যক্রম সরাসরি যাচাই করা যায়নি। অফিস থাকলেও প্রশাসনিক কর্মতল বা প্রযুক্তিগত স্থাপনার চিহ্ন নেই। ফলে স্থানীয় কার্যক্রম কতটুকু বাস্তবে চলছে, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

স্টারলিংক দাবি করেছে দেশে কয়েকটি গেটওয়ে (গাজীপুর—কালিয়াকৈর—দুইটি, যশোর ও রাজশাহী) স্থাপন করা হয়েছে এবং সৈয়দপুর, কক্সবাজার, সিলেট ও কুমিল্লায়ও গেটওয়ে স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু বিটিআরসির পরিদর্শনে স্টারলিংক প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতির কারণে গেটওয়েগুলোর কার্যকারিতা পুরোপুরি যাচাই করা যায়নি। এছাড়া তারা কি দেশে স্থাপিত গেটওয়ে ব্যবহার করে ট্রাফিক চালাচ্ছে, নাকি বহিরাগত গেটওয়ের মাধ্যমে ট্রাফিক আনা হচ্ছে—তাও স্পষ্ট নয়।

গ্রাহকসংখ্যা খুব বেশি নয়: ২০ মে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করার পর ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিটিআরসিকে স্টারলিংক জানিয়েছে মোট গ্রাহক ১,৮৬২—যার মধ্যে রেসিডেন্সিয়াল ও বিভিন্ন শ্রেণির গ্রাহক রয়েছে। এছাড়াও তারা আইআইজি অপারেটরদের কাছ থেকে ৮০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ নিয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ৩০ জিবিপিএস ব্যবহার করা হচ্ছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ আছে। প্রতিষ্ঠানটির পপ ও ব্যাকবোন ক্ষমতা সম্পর্কিত সংখ্যাও দেয়া হয়েছে। তবে এসব তথ্যের প্রামাণিকতা ও ব্যবহারিক বাস্তবতা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার কাছে সন্তোষজনক নয়।

এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ — মনিটরিং টুল কাজ করছে না: লাইসেন্স শর্ত অনুযায়ী স্টারলিংক এনটিএমসিকে (‘কমপ্লায়েন্স এপিআই টুল’) সরবরাহ করেছে বলে জানিয়েছে। কিন্তু বিটিআরসি ও এনটিএমসি যৌথভাবে পরীক্ষা করে দেখেছে, ওই টুল থেকে প্রয়োজনীয় মনিটরিং ডেটা আদায় হচ্ছে না। এনটিএমসি তাদের চাহিদামতো তথ্য পাচ্ছে না; ফলে আইনানুগ ইন্টারসেপশন ও নিরাপত্তাজনিত পর্যবেক্ষণ ব্যাহত হচ্ছে। এ বিষয়ে স্টারলিংক ও এনটিএমসির মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে, তবু জট খুলেনি।

আরও উদ্বেগের বিষয়: স্টারলিংক বিদেশি (রোমিং) গ্রাহকদের বাংলাদেশে সেবা দেয়ার প্রস্তাব করেছে — আইপিএলসি ও আনফিল্টারড আইপি ট্রানজিটের মাধ্যমে। বিটিআরসি মনে করছে, লাইসেন্স ও নির্দেশিকায় এমন সেবার এখতিয়ার স্পষ্ট নয় এবং এটা জাতীয় নীতি ও নিরাপত্তার প্রশ্ন উত্থাপন করে। কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে: কোনো বাংলাদেশি গ্রাহককে সরাসরি আইপিএলসি/আনফিল্টারড ট্রানজিটের মাধ্যমে সেবা দেয়া যাবে না; স্টারলিংককে স্পষ্টভাবে দেখাতে হবে কীভাবে দেশীয় ও বিদেশি ট্রাফিক আলাদা রাখবে এবং মনিটরিং নিশ্চিত করবে।

বিটিআরসি সভার সিদ্ধান্তে স্টারলিংককে তাদের সব গ্রাউন্ড স্টেশন, স্থিতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়েছে; বিদেশি রোমিং গ্রাহক সেবা কিভাবে প্রদেয় হবে তা স্পষ্ট করতে হবে; এবং ট্রাফিক পৃথকীকরণের প্রযুক্তিগত সমাধান ও কার্যকর মনিটরিং টুল প্রদর্শন করতে হবে।

খাতের অন্যান্য অংশীদাররা বলেন, প্রযুক্তি খাতে নতুন খেলোয়াড় আসা স্বাগত, কিন্তু লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকে স্থানীয় আইন, সাইবার নিরাপত্তা ও তথ্য সার্বভৌমত্ব মেনে চলতেই হবে। আইএসপিএবির মত অনুযায়ী, স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যে কমপ্লায়েন্স মানে, বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও একই মান প্রযোজ্য করা উচিত—অন্যথায় নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

শেয়ার করুন