১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার
১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শত বছর পর সৈকতে মিলল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের চিঠি

শেয়ার করুন

অস্ট্রেলিয়ার এক নির্জন সৈকতে শত বছর পর ভেসে উঠেছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়া দুই অস্ট্রেলীয় সৈন্যের লেখা বোতলবন্দি দুটি চিঠি। ১৯১৬ সালে লেখা এই চিঠিগুলো এক শতাব্দীরও বেশি সময় পরে উদ্ধার হয়, যা এখন ইতিহাসপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের জন্ম দিয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, সৈন্যরা ফ্রান্সগামী জাহাজে চড়ার পরপরই চিঠিগুলো লিখেছিলেন। তাতে ছিল যুদ্ধযাত্রার আগের আনন্দ, কৌতুক আর তরুণসুলভ উত্তেজনা।

চিঠির লেখকদের একজন ছিলেন ২৮ বছর বয়সী প্রাইভেট ম্যালকম নেভিল। তিনি মাকে লিখেছিলেন, জাহাজের খাবার “চমৎকার” এবং তারা “অত্যন্ত আনন্দে” আছেন। তবে কয়েক মাস পরই যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ হারান তিনি। অপরজন ছিলেন ৩৭ বছর বয়সী প্রাইভেট উইলিয়াম হার্লি, যিনি যুদ্ধ শেষে জীবিত ফেরেন।

সম্প্রতি পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার দূরবর্তী হোয়াইটন সৈকতে স্থানীয় নারী ডেব ব্রাউন ও তার পরিবার বোতলটি খুঁজে পান। নিয়মিত সৈকত পরিষ্কারের সময় তারা বালুর নিচে পুরু কাচের বোতলটি দেখতে পান।

ব্রাউন জানান, “আমরা প্রায়ই সৈকত পরিষ্কার করি, তাই কোনো জিনিস ফেলে যাই না। এই ছোট বোতলটিও তেমনি কৌতূহল থেকে তুলে দেখি।”

ভেজা অবস্থায় পাওয়া কাগজেও লেখাগুলো স্পষ্ট ছিল। চিঠিতে দেওয়া ঠিকানা ব্যবহার করে ব্রাউন অনলাইনে নেভিলের পরিবারের খোঁজ পান এবং যোগাযোগ করেন তাঁর আত্মীয় হার্বি নেভিলের সঙ্গে। হার্বি বলেন, “এটা আমাদের পরিবারের জন্য এক অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে আমার খালা মারিয়ান ডেভিসের জন্য, যিনি ছোটবেলায় চাচাকে যুদ্ধে যেতে দেখেছিলেন কিন্তু আর ফেরেননি।”

অন্য চিঠিটি লিখেছিলেন উইলিয়াম হার্লি। যেহেতু তাঁর মা তখন বেঁচে ছিলেন না, তাই তিনি লিখেছিলেন “যে এই বোতলটি খুঁজে পাবে” তার উদ্দেশে। তাঁর নাতনি অ্যান টার্নার বলেন, “এটা যেন এক অলৌকিক ঘটনা। মনে হচ্ছে দাদু সমাধি থেকে আমাদের উদ্দেশে হাত বাড়িয়েছেন।”

হার্লির চিঠিতে উল্লেখ ছিল, বোতলটি নিক্ষেপ করা হয়েছিল দ্য গ্রেট অস্ট্রেলিয়ান বাইট থেকে—দেশটির দক্ষিণ উপকূলের বিশাল সাগরীয় অঞ্চল।

অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্রবিজ্ঞানী এক অধ্যাপক জানিয়েছেন, বোতলটি হয়তো প্রথমে অল্প সময় পানিতে ভেসেছিল, এরপর সৈকতের বালুর নিচে চাপা পড়ে শত বছর অক্ষত থেকেছে।

ইতিহাসবিদদের মতে, এই দুটি চিঠি শুধু যুদ্ধের স্মৃতি নয়, বরং মানুষের আবেগ, আশাবাদ ও হারিয়ে যাওয়া প্রজন্মের এক জীবন্ত দলিল হয়ে উঠেছে।

সিএনআই/২৫

শেয়ার করুন