
হঠাৎ কেউ শরীর ছুঁলে কিংবা ঠান্ডা বাতাস লাগলেই হাত-পায়ের লোম খাড়া হয়ে যায়—এই অনুভূতিটিই হলো গায়ে কাঁটা দেওয়া, ইংরেজিতে যাকে বলে Goosebumps। প্রশ্ন হলো, শরীর এমনটা করে কেন?
বিশেষ কিছু অবস্থায় আমাদের ত্বকের রোমকূপ সঙ্কুচিত হয়ে শক্ত হয়ে ওঠে। তখনই আমরা বলি “গায়ে কাঁটা দিয়েছে।” এটি কেবল মানুষের নয়, সব স্তন্যপায়ীর শরীরেই দেখা যায়। ঠান্ডা পড়লে ত্বক তাপ ধরে রাখার জন্য একধরনের ক্ষুদ্র প্রতিরক্ষামূলক আবরণ তৈরি করে—যা দেখতে গায়ের কাঁটার মতো।
গায়ে কাঁটা দেওয়ার পেছনে হরমোনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ঠান্ডা, ভয়, উত্তেজনা বা আবেগের সময় শরীরের হরমোন সক্রিয় হয়ে স্নায়ু উদ্দীপিত করে। ফলে ত্বক লোমকূপ সংকুচিত করে এবং লোম খাড়া হয়ে যায়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই পুরো প্রক্রিয়াটি আসলে স্নায়ুর খেলা। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা জানিয়েছেন—ত্বকের নিচে থাকা স্নায়ু ও স্টেম কোষ মিলে এই প্রতিক্রিয়া ঘটায়। যখন শরীর কোনো উত্তেজনা, ভয় বা আবহাওয়ার পরিবর্তন টের পায়, তখন স্নায়ু সেই সংকেত স্টেম কোষে পাঠায়। স্টেম কোষ তাৎক্ষণিকভাবে রোমগ্রন্থিকে সক্রিয় করে তোলে, ফলে লোম খাড়া হয়ে ওঠে।
শুধু ঠান্ডা বা ভয় নয়—কখনো কখনো গান শুনলেও গায়ে কাঁটা দেয়। কারণ, মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রের একটি অংশ অডিটরি কর্টেক্সের সঙ্গে যুক্ত থাকে। প্রিয় গান শুনে বা গভীর আবেগে শরীরের হরমোন পরিবর্তিত হয়, স্নায়ু সক্রিয় হয়, আর ফলেই ঘটে সেই গায়ে কাঁটা দেওয়া প্রতিক্রিয়া।
অর্থাৎ, গায়ে কাঁটা দেওয়া মানে কেবল ঠান্ডার প্রতিক্রিয়া নয়—এটি শরীরের প্রাকৃতিক সুরক্ষা ব্যবস্থা ও আবেগীয় প্রতিক্রিয়া। স্নায়ু, হরমোন ও স্টেম কোষ একসঙ্গে মিলে আমাদের শরীরকে বাইরের পরিবেশ ও ভেতরের অনুভূতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করে।
সিএনআই/২৫