
বাংলার সংগীত জগতে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছিলেন আব্বাসউদ্দীন আহমদ। ‘আমার হাড় কালা করলাম রে’, ‘আল্লাহ মেঘ দে পানি দে’, ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ এবং ‘আগে জানলে তোর ভাংগা নৌকায় উঠতাম না’-এর মতো কালজয়ী গান তাঁর কণ্ঠে ভর করে সর্বত্র জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালী ও ইসলামি গানে তাঁর দরদভরা কণ্ঠ শ্রোতাদের মুগ্ধ রাখে।
লোকসংগীতকে গ্রাম থেকে শহরে সর্বজনীন করে তোলার ক্ষেত্রে আব্বাসউদ্দীনের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি ১৯০১ সালের ২৭ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার বলরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তেমন না থাকলেও, গানের প্রতি তাঁর প্রবল আকর্ষণ এবং নিজস্ব শৈল্পিক প্রয়াস তাঁকে শ্রোতাদের কাছে পরিচিত করে তোলে।
কলকাতায় এসে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অনুপ্রেরণা নিয়ে তিনি গ্রামোফোনে গান রেকর্ড করেন। তাঁর প্রথম রেকর্ড করা গান ছিল ‘কোন বিরহীর নয়নজলে বাদল ঝরে গো’, যা বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গেই বিপুল সাড়া ফেলে।
সংগীতজীবনে তিনি প্রায় সাত শতাধিক গান উপহার দিয়েছেন। রংপুর ও কোচবিহার অঞ্চলের ভাওয়াইয়া গানে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন। ভাওয়াইয়া, ক্ষীরোল-চটকা, জারি, সারি, ভাটিয়ালি, মুর্শিদি, বিচ্ছেদি, দেহতত্ত্ব, মর্সিয়াসহ পল্লীগীতি গানে তাঁর সুরেলা কণ্ঠ নতুন মাত্রা যোগ করেছিল।
সংগীতের পাশাপাশি আব্বাসউদ্দীন আহমদ চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছেন। ‘বিষ্ণুমায়া’ (১৯৩২), ‘মহানিশা’ (১৯৩৬), ‘একটি কথা’ এবং ‘ঠিকাদার’ (১৯৪০) সহ কয়েকটি চলচ্চিত্রে দেখা গেছে তাঁকে।
সংগীত ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি মরণোত্তর প্রাইড অব পারফরমেন্স, শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার ও স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারসহ একাধিক সম্মান লাভ করেন। ১৯৫৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর এই কিংবদন্তী শিল্পীর জীবনাবসান ঘটে।
সিএনআই/২৫