
দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ব্যবহৃত ভারী চিকিৎসা যন্ত্র সচল আছে কি না তা জানতে ২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন একটি সফটওয়্যার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আগেও প্রায় একই উদ্দেশ্যে তৈরি সফটওয়্যার অকেজো হয়ে পড়ে থাকায় নতুন প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
সূত্র জানায়, এর আগেও ইউএসএআইডির অর্থায়নে ‘অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ নামে একটি সফটওয়্যার চালু করা হয়েছিল। এতে প্রতিটি যন্ত্রে কিউআর কোড ব্যবহার করে তার কার্যকারিতা ও রক্ষণাবেক্ষণের তথ্য জানা যেত। কিন্তু সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপো (CMSD) ও ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিকেল ইক্যুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিউ অ্যান্ড টিসি) উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়।
ফলে ব্যয়বহুল সফটওয়্যারটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। নতুন প্রকল্প নেওয়ায় অনেকেই একে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বলে মনে করছেন।
চলতি বছরের ১৮ আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিমিউ অ্যান্ড টিসিকে নতুন সফটওয়্যার তৈরির নির্দেশ দেয়। নতুন প্রকল্পের নাম ‘মেডিকেল ইক্যুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ইনফরমেশন অ্যান্ড মনিটরিং সিস্টেম’।
প্রকল্পটির আওতায় সরকারি হাসপাতালগুলোর উচ্চপ্রযুক্তির যন্ত্র—যেমন এমআরআই, সিটি স্ক্যান, কোবাল্ট, এক্স-রে, রেডিওথেরাপি ইত্যাদি যন্ত্রের কার্যকারিতা অনলাইনে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
প্রাথমিক প্রস্তাবে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। পরে তা বাড়িয়ে ২৯ কোটিতে উন্নীত করা হয়। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা বলছেন, এই ধরনের সফটওয়্যারের জন্য সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার ব্যয় যুক্তিসঙ্গত; অতিরিক্ত ব্যয়কে তারা প্রশ্নবিদ্ধ মনে করছেন।
প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান নিমিউ অ্যান্ড টিসি সফটওয়্যারটির ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ উভয়ের দায়িত্বে থাকবে। এর ফলে যন্ত্র বিকল হলে সিদ্ধান্তও তাদের হাতেই থাকবে, যা স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে সংশ্লিষ্ট মহলে।
এই সফটওয়্যার চালু হলে হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ক্লাউড স্টোরেজে সংযুক্ত থাকবে। কোনো যন্ত্র বিকল হলে তাৎক্ষণিকভাবে কেন্দ্রীয় সার্ভারে নোটিফিকেশন যাবে। তবে দেশে মোট ১৫টি উচ্চপ্রযুক্তির যন্ত্রের মধ্যে মাত্র ৭টিতে ‘কম্প্রিহেনসিভ মেইনটেন্যান্স কন্ট্রাক্ট’ (CMC) রয়েছে। ফলে সফটওয়্যারের পূর্ণ সুবিধা পাওয়া অনিশ্চিত।
ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১১৪টি সরকারি হাসপাতালের ৩০০টি যন্ত্র এই সিস্টেমে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
নিমিউ অ্যান্ড টিসির চিফ টেকনিক্যাল ম্যানেজার জয়ন্ত কুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, “৪১৫টি যন্ত্র মেরামতের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। জনবল সংকটের কারণে প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হচ্ছে।”
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে ৯৫টি অনুমোদিত পদের মধ্যে ৫৮টি শূন্য। নতুন করে ৫৫ জন প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, “অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এখনো বরাদ্দ না পাওয়ায় সফটওয়্যার স্থাপন শুরু হয়নি। আগের সফটওয়্যার কার্যকর ছিল কি না, সেটি যাচাই করা হচ্ছে।”
সিএন আই/২৫