
দেশের বাজারে চালের দাম নিম্নমুখী হলেও খুচরা বাজারে এখনো তেমন প্রভাব পড়েনি। রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি বাজারে চালের দাম প্রতি বস্তায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত কমলেও খুচরা পর্যায়ে আগের দামে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।
পাইকারিতে কমছে চালের দাম
রাজধানীর শ্যামবাজার, সূত্রাপুর ও নিউমার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে বস্তাপ্রতি ২ হাজার ৮০০ টাকায়, যা আগে ছিল ২ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। পাইজাম চালের দামও কমে এসেছে ২ হাজার ৭০০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ২ হাজার ৯০০। কাটারিভোগ চাল বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ টাকায়, যা আগে ছিল ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার টাকা। নাজিরশাইলের দামও কমে এসেছে ২ হাজার টাকায়।
সরকারি সংস্থা টিসিবির তথ্যমতে, এক মাসের ব্যবধানে সরু চালের দাম ১.৮৫% এবং মাঝারি মানের চালের দাম ৩.৭২% পর্যন্ত কমেছে।
আমদানি বাড়ায় দাম কমছে
খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে মোট ১৩ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে—এর মধ্যে সরকারিভাবে ৮ লাখ ৩৫ হাজার টন এবং বেসরকারিভাবে ৪ লাখ ৭০ হাজার টন। ভারত, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও পাকিস্তান থেকে এসব চাল এসেছে।
সরকার আরও ৫০ হাজার টন চাল ভারত থেকে এবং ২ লাখ ২০ হাজার টন গম যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে বাজারে সরবরাহ বেড়েছে, যা দামের পতনে প্রভাব ফেলছে।
শ্যামবাজারের এক চাল ব্যবসায়ী শেখ মো. জহির বলেন,
“বাজারে প্রচুর ভারতীয় চাল এসেছে, তাই দাম কমছে। আমন মৌসুমের ধান উঠলে সরবরাহ আরও বাড়বে।”
খুচরা বাজারে দাম অপরিবর্তিত
তবে খুচরা বাজারে তেমন পরিবর্তন দেখা যায়নি। সূত্রাপুর ও ধানমন্ডির ক্রেতারা জানিয়েছেন, খুচরা বিক্রেতারা এখনো পুরোনো দামে চাল বিক্রি করছেন।
ক্রেতা নিলয় আহমেদ বলেন,
“পাইকারিতে দাম কমলেও খুচরায় কমেনি। আশা করছি এক সপ্তাহের মধ্যে খুচরা বাজারেও প্রভাব পড়বে।”
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারিতে দামের প্রভাব খুচরায় পৌঁছাতে এক সপ্তাহ সময় লাগে। কারণ পুরোনো মজুত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিক্রেতারা নতুন দামে বিক্রি করতে চান না।
প্রতিযোগিতা ও বাজার স্থিতিশীলতা
চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন বলেন,
“ভারতীয় চালের প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশীয় চালের চাহিদা কিছুটা কমেছে। আগে বড় গ্রুপগুলো বাজার নিয়ন্ত্রণ করত, এখন যে কেউ চাল আমদানি করতে পারছে—ফলে প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে।”
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার যদি আমদানি অব্যাহত রাখে এবং বাজার তদারকি জোরদার করে, তবে আগামী সপ্তাহেই খুচরা পর্যায়েও দাম কমে আসবে।
আমদানির প্রভাবে পাইকারি বাজারে চালের দাম কমছে, তবে খুচরা বাজারে এখনো স্থিতিশীল। সরবরাহ বাড়ায় আগামী সপ্তাহগুলোতে দাম আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।