
মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, সাতক্ষীরা: শিহাব আহমেদ। পেশায় ব্যবসায়ী। কিন্তু শুরুটা ছিল অনেক সংগ্রামের। অভাব অনাটনের বেড়াজালে পড়ে পাড়ি জমাতে হয়েছিল বিদেশে। তারপর আর তাকে ফিরে তাকাতে হয়নি। তার করা সংগ্রাম তাকে পৌছে দিয়েছে হিমালয়ের সেই উচ্চ শৃঙ্গে।
বিদেশে থেকে কাজের ফাকে চিন্তা করতেন কয়েক বছর আগের দৃশ্য গুলো। সেই ভাবা থেকে দেশে ফেরা। কিন্তু বাড়ি ফিরে ও কাজেের ফাঁকে ছোটে চলেতন অসহায় মানুষের দ্বারে। কখনো কখনো অর্থ খাবার ও নতুন পোশাক পৌঁছে দিতেন ছিন্নমূল মানুষের কাছে আবার কখনো অভাবীদের চিকিৎসা খরচ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করতেন তিনি। স্বল্প আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি গৃহহীনদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করেছেন অনেকের। আবার কখনও অভাবী শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার খরচও জুগিয়ে দিয়েছেন। এ ছাড়াও যে কোনো মানবিক বিপর্যয়ে ছুটে যান শিহাব আহমেদ। তাই স্থানীয়দের কাছে তিনি কেবল ব্যবসায়ী নন, মানবতার ফেরিওয়ালা হিসেবেও পরিচিত।
তিনি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নে ১৯৯৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। শিহাব হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজের ছেলে। ১৪ ভাইবোনের মধ্যে সপ্তম শিহাব। তার দুই বছর বয়সে মা মারা যান। বাবা আরেকটি বিয়ে করেন। শিশুকালে মা মারা যাওয়ায় নানি ও অন্য আত্মীয়রা তাকে লালন পালন করেন। এরপর সবজি বিক্রি, ট্রাকের হেলপার (সহকারী) ও রিকশা চালিয়ে লেখাপড়া করে ২০১৪ সালে বড়খাতা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ (গোল্ডেন এ প্লাস) পান। মানুষের সংগ্রাম, দুঃখ-কষ্ট এবং তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম দেখতে কেটেছে তার শৈশব। সেই বাস্তবতা থেকে নিজেকে গড়ে তুলার প্রত্যয়ে শুরু করেন পথচলা। যাতে একদিন আমার এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি। দেশের বাইরে বহু বছর কাটিয়ে শিক্ষা, ব্যবসা ও অভিজ্ঞতার আলোয় আলোকিত হয়ে ফিরে আসেন দেশে। উন্নত বিশ্বের জীবনযাত্রা ও প্রযুক্তি দেখে উপলব্ধি করেন গ্রাম, এবং দেশের মানুষও গুলোর পাশে দাড়াবেন।
মানবতার ফেরিওয়ালা হওয়ার পিছনের গল্প টেনে শিহাব বলেন, ব্যবসার মুনাফা আমার কাছে শুধু ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনার একটি হাতিয়ার। যেহেতু আমি জীবিকা নির্বাহ করতে গিয়ে আমাকে অনেক পেশায় কাজ করতে হয়েছে। পাশাপাশি পড়ালেখার খরচ চালাতে বড়খাতা বাজারে তৃতীয় শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত সবজি বিক্রি করতাম। তাই সমাজসেবায় যুক্ত হওয়ার পেছনে মূল অনুপ্রেরণা এসেছে মানুষের কষ্ট ও দূর্দশা কাছ থেকে অবলোকন করে। ছোটবেলা থেকেই দেখেছি শিক্ষার অভাবে প্রতিভা নষ্ট হচ্ছে, চিকিৎসার অভাবে প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ব্যবসার পাশাপাশি সমাজসেবাকে জীবনের অংশ করব। যখন ‘মানুষের জন্য কিছু করতে পারি তখন আমার মাঝে আমি আলাদা একটা আনন্দ খুঁজে পাই। যখন কোনো অসহায়, দুস্থ মানুষকে সাহায্যের মাধ্যমে তাঁর মুখে হাসি ফোটাতে পারি তখন হৃদয় যে প্রশান্তিতে ভরে যায় তা বলে বোঝানো যাবে নাহ। মনে হয় হাসিটা আমার মায়ের মুখে দেখছি।
মায়ের কথা বলা মাত্রই চোখের কোণে পানি আসলো। চোখ মুছতে মুছতে শিহাব আরো বলেন, আমার মাকে আমি ছােট বেলায় হারিয়েছি। তাকে আমি অসহায় মানুষদের মাঝে দেখতে পায়। আমি যখন তাদেন পাশে দাড়ায় তখন আমি আমার মায়ের কথা মনে আসে। তাদের মুখে হাসিটায় আমার মায়ের মুখে হাসি দেখি।
সামাজিক কার্যক্রম ও অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, আমি বিশ্বাস করি—মানুষের পাশে দাঁড়ানোই সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। তাই সর্বদা মত ধর্ম বর্ণ ভেদাভেদ না করে দুই উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছি। এ পর্যন্ত হাতীবান্ধা–পাটগ্রামের লক্ষাধিক পরিবার ও সমাজের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ।
২৫০০০ এর বেশি পরিবারে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করেছি। ১০০০ এর অধিক মসজিদ মাদ্রাসা এতিমখানায় ওযুখানা স্থাপন করেছি ১৫টি মসজিদ মাদ্রাসা এতিমখানা নির্মাণ করেছি ২০০০ এর অধিক গরু ছাগল কোরবানি করে প্রোটিনের চাহিদা পূরণে অবদান রেখেছি করণা কালিন এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ২০০০০ এর অধিক পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছি ১০টি পরিবারকে বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছি ১০০ এর অধিক শারীরিক প্রতিবন্ধীকে চলাচলের জন্য হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করে দিয়েছি অসংখ্য ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীকে ক্ষুদ্র পরিসরে ব্যবসা শুরু করতে আর্থিক সহায়তা দিয়েছি শত শত অসহায় ও দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছি। ৩ লক্ষাধিক মানুষের জন্য একবেলা গরম খাবার ও ইফতার বিতরণ করেছি।
দুই উপজেলার ২০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ১৮৯টি ওয়ার্ডে ২১০টি “শিহাব আহমেদ শিশু বিকাশ একাডেমি” করে দিয়েছি আমার স্বপ্ন ২ উপজেলার প্রতিটি সন্তানের হাত ধরব এবং একটি প্রজন্মকে আগামীর হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম এবং সমগ্র বাংলাদেশের জন্য গড়ে তুলব।
হাতীবান্ধা পাটগ্রাম উপজেলার শতাধিক অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য “শিহাব আহমেদ শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করছি। ভবিষ্যতে এ কার্যক্রম আরও বড় পরিসরে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। আমার স্বপ্ন, এই এলাকার কোনো প্রতিভাবান শিক্ষার্থী যেন অর্থাভাবে থেমে না যায়। তবে এই শিক্ষাবৃত্তি পাওয়ার শর্ত একটি আমি যেভাবে নিঃস্বার্থভাবে আপনার হাত ধরতেছি ঠিক একইভাবে আপনিও শিক্ষাজীবন শেষ করে কর্মজীবনে ফিরে হাতীবান্ধা পাটগ্রামের ১ জন দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীর হাত ধরুন।