১৬ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার
৩১শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কবি নজরুল কলেজ ইউনিট বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের মানববন্ধন

শেয়ার করুন

কবি নজরুল কলেজ প্রতিনিধিঃ রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী সরকারি সাত কলেজে উচ্চশিক্ষা ও নারী শিক্ষার সংকোচন, কলেজের স্বতন্ত্র কাঠামো ও ঐতিহ্য বিলুপ্তির প্রচেষ্টা এবং শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের প্রতিবাদে কবি নজরুল সরকারি কলেজ বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন ইউনিট মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।

বুধবার ( ২৪ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১২ টায় কলেজের মূল ফটকের সামনে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। মানববন্ধনে কলেজের সকল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহ অন্যান্য শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।

এসময় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, কবি নজরুল একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। এর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির যেমন অন্যান্য অংশীজন রয়েছে, তেমনি আমরাও এর এক ধরনের অংশীজন।

সমস্যাগুলো সমাধানে সরকারের কাছে আপনাদের কি দাবি থাকবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সমস্যাগুলো সমাধানে আমি মনে করি আমাদের সঙ্গে বসতে হবে। কারণ আমরাও এখানকার একেক জন অংশীজন। সাতটি কলেজ মিলে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের প্রায় ১৪০০ পদ রয়েছে। যদি আমাদের এখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে এই পদগুলো রক্ষিত থাকবে কি না সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট বিবৃতি নেই। আর যদি এই ১৪০০ পদ শিক্ষা ক্যাডার থেকে সরে যায়, তাহলে আমাদের প্রমোশনের ক্ষেত্রে জটিলতা আরও বাড়বে, কমবে না।

সাত কলেজে উচ্চশিক্ষা ও নারী শিক্ষার সংকোচন বলতে কি বোঝাচ্ছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে গণিত বিভাগের প্রভাষক আবু তাহের বলেন, বর্তমান বিদ্যমান ব্যবস্থায় প্রতিটি কলেজে বহু বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স পড়ানো হয়। কিন্তু প্রস্তাবিত অনুষদভিত্তিক ক্যাম্পাস কাঠামোর কথা বলা হয়েছে তাতে খুব অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থীই উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবে। ফলে জনবহুল এই শহরে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। এতে করে শিক্ষা বাণিজ্যিকীকরণের আশঙ্কা আমরা করছি।

মানববন্ধন শেষে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকরা তাদের ৮ দফা দাবি উপস্থাপন করেন । দাবিগুলো হলো:

১। সাত কলেজের নাম সাইনবোর্ড) থা কাঠামো পরিবর্তন করে কোনো অনুষদে অথবা স্কুলে রূপান্তর করা যাবে না। অর্থাৎ কলেজ কাঠামোর মৌলিক রূপ ভেঙে অনুষদভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা যাবে না।
২। কলেজের লোগোসহ স্থাবর ও অস্থাবর সকল সম্পত্তি স্ব-স্ব কলেজের নামে অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। কোনোভাবেই জোরপূর্বক এসব সম্পদের মালিকানা প্রস্তাবিত কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে হস্তান্তর গ্রহণযোগ্য নয়। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস অবশ্যই পৃথক স্থানে প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
৩। সাত কলেজকে পরীক্ষাগার বা গিনিপিগ বানিয়ে কোনো পরীক্ষামূলক বিশ্ববিদ্যালয় মডেল চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। সাতটি সরকারি কলেজকে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাখা হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে হবে এবং সকল পদে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
৪। বিদ্যমান কোনো বিষয় বিয়োজন করা যাবে না। বিশেষত আরবি ও ইসলাম শিক্ষা বাদ দেওয়ার চেষ্টা ইসলামবিদ্বেষের সামিল এবং তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
৫। ঢাকা কলেজসহ পাঁচটি কলেজ দীর্ঘদিন ধরে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করে আসছে। তাই উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম স্বার্থবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য হবে না।
৬। সাত কলেজে ইতোমধ্যেই উচ্চশিক্ষার ব্যাপক সংকোচন করা হয়েছে। বিশেষত ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা কলেজ বহু বছর ধরে নারীদের জন্য নিরাপদ ও সাশ্রয়ী উচ্চশিক্ষার সুযোগ প্রদান করে আসছে। প্রস্তাবিত কাঠামোয় নারী শিক্ষার ব্যাপক সংকোচনের পরিকল্পনা স্পষ্ট, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
৭। সাত কলেজে কর্মরত কোন কর্মচারীর চাকুরী বা অন্য কোন স্বার্থ ক্ষুন্ন করা যাবে না।
৮। সাত কলেজ সরকারের বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এর সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তনের পূর্বে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের মতামত গ্রহণ ও যৌক্তিকতা যাচাই করা আবশ্যক। এজন্য প্রস্তাবিত খসড়া অধ্যাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিল্পা অধিদপ্তর, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, আইন পেশাজীবী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের এবং সকল পর্যায়ের বুদ্ধিজীবী ও বিশেষজ্ঞগণের সমন্বয়ে গঠিত একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন রিভিউ কমিটির মাধ্যমে পর্যালোচনা করতে হবে।

শেয়ার করুন