
ফাউন্ডেশন ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (এফএসডিএস)-এর যাত্রা শুরু
রাষ্ট্রে সুশাসন, জাতীয় নিরাপত্তা, উন্নয়ন এবং নীতি নির্ধারণে গবেষণা পরিচালনার লক্ষ্যে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফাউন্ডেশন ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (এফএসডিএস) আত্মপ্রকাশ করেছে।
রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর হোটেল রেডিসনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে।
প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি
এফএসডিএস-এর চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে ইলাহী আকবর উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশের জন্য একটি সুসংহত ও ব্যাপক প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র নীতি গঠন করা জরুরি। আমাদের লক্ষ্য জাতীয় সংহতি ও অগ্রগতির স্বার্থে সহযোগিতা ও সংযোগ বৃদ্ধি করা।”
তিনি আরও বলেন, যদিও একই উদ্দেশ্যে কাজ করা আরও কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তবে ‘বাংলাদেশ ফার্স্ট’ নীতিকে কেন্দ্র করে এফএসডিএস তার গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। সংগঠনটির মূল ফোকাস থাকবে—
জাতীয় নিরাপত্তা,
বেসামরিক ও সামরিক খাতের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি,
ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে ইলাহী আকবর বলেন, “গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ রাজনৈতিক ও সামাজিক নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং দুর্নীতি। বিশেষত গত পনেরো বছরে নির্বাচন কেবল আনুষ্ঠানিক ইভেন্টে পরিণত হয়েছে, যা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করেছে।”
তিনি বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান তুলে ধরে বলেন, “দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সংযোগস্থলে অবস্থান বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার বাজারে প্রবেশের মাধ্যমে কূটনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ ও বৈচিত্র্যময় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য গড়ে তোলা জরুরি।”
জাতীয় নিরাপত্তা ও সমুদ্রসীমার গুরুত্ব
বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “বৈশ্বিক বাণিজ্য ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বঙ্গোপসাগর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর প্রাকৃতিক সম্পদ ও গুরুত্বপূর্ণ শিপিং রুটগুলোর প্রতি আন্তর্জাতিক আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে, যা বাংলাদেশকে আঞ্চলিক সামুদ্রিক নিরাপত্তার প্রধান অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ককে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তার ভিত্তিতে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখা অপরিহার্য, যা আমাদের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগের মূল ভিত্তি হতে পারে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, আমাদের রাজনৈতিক আলোচনায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি প্রায়ই উপেক্ষিত হয়ে আসছে।”
নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এফএসডিএস অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলোকেও গুরুত্ব দিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে—
রোহিঙ্গা সংকট,
পার্বত্য চট্টগ্রামের উত্তেজনা,
জলবায়ুজনিত দুর্যোগ,
রাজনৈতিক সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদী হুমকি।
তিনি বলেন, “আমাদের সশস্ত্র বাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অসামান্য অবদান রেখেছে। এই অভিজ্ঞতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”
গবেষণার মাধ্যমে নীতিনির্ধারকদের সহায়তা
এফএসডিএস-এর মূল উদ্দেশ্য হলো—
দেশের নিরাপত্তা ও উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা,
সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করা,
নীতিনির্ধারকদের জন্য কার্যকর সুপারিশ তৈরি করা।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমাদের কার্যক্রম সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং গবেষণাধর্মী বিশ্লেষণ, বিতর্ক ও জরিপের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ব্যক্তিরা
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন—
তিন বাহিনীর প্রধান,
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর,
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী,
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না,
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের,
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম,
প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান,
দৈনিক মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী,
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষকবৃন্দ।
বক্তব্য রাখেন—
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী,
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান,
মেজর জেনারেল (অব.) আবুল কালাম মো. হুমায়ুন কবির,
লে. জেনারেল (অব.) এমরান উদ্দিন খান।