১৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার
১লা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রে ২৬ দিনে চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ১০ হাজার সরকারি কর্মী

শেয়ার করুন

যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি ব্যয় সংকোচনে গণছাঁটাই, বিপাকে হাজারো কর্মী

সরকারি ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন ব্যাপক কর্মী ছাঁটাইয়ের পদক্ষেপ নিয়েছে। গত ২০ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে চাকরি হারিয়েছেন ৯,৫০০-এর বেশি সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মী। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সরকারি ব্যয় সংকোচন ও ইলন মাস্কের ভূমিকা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ধনকুবের ইলন মাস্কের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের। শপথ গ্রহণের পরই ট্রাম্প ‘সরকারি ব্যয় সংকোচন ও কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি’ নামে নতুন একটি দপ্তর খোলার নির্দেশ দেন, যার প্রধান করা হয় ইলন মাস্ককে। তবে কংগ্রেসের অনুমোদন না পাওয়ায় এটি এখনো মন্ত্রণালয়ের স্বীকৃতি পায়নি, ফলে মাস্ককে মন্ত্রীর পরিবর্তে ‘উপদেষ্টা’ পদেই থাকতে হচ্ছে।

২০ জানুয়ারি ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের দিন থেকেই সরকারি চাকরিজীবীদের ছাঁটাই শুরু হয়, যা এখন প্রায় ১০ হাজারে পৌঁছেছে। ছাঁটাইয়ের তালিকায় স্বরাষ্ট্র, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, অবসরপ্রাপ্ত সেনাদের পুনর্বাসন, কৃষি, স্বাস্থ্য এবং মানবিক পরিষেবা মন্ত্রণালয়ের কর্মীরা রয়েছেন। পুরো প্রক্রিয়াটি ইলন মাস্কের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে।

আরও ছাঁটাইয়ের শঙ্কা

শিগগিরই আরও হাজারো কর্মী ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের কর আদায়কারী সংস্থা ইন্টারনাল রেভিনিউ সার্ভিস (আইআরএস) জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহে ১,০০০-এর বেশি কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে ছাঁটাইয়ের নোটিশ দেওয়া হবে। আইআরএস যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ সরকারি সংস্থা, যেখানে এ ধরণের ছাঁটাই অভূতপূর্ব ঘটনা।

‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেক’ কর্মসূচি

ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি ‘বাইআউট কর্মসূচি’ বা ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেক’-এর আওতায় ৭৫ হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। এই কর্মসূচির মাধ্যমে কর্মীদের আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে চাকরি ছাড়তে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

সরকারি সংস্থায় বরাদ্দ বন্ধ, অস্তিত্ব সংকট

কর্মী ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি অনেক সরকারি সংস্থার আর্থিক বরাদ্দও বন্ধ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এর ফলে বেশ কয়েকটি দপ্তর অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। দেশটির ভোক্তা অধিকার সংস্থা কনজ্যুমার ফিন্যান্সিয়াল প্রোটেকশন ব্যুরো ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে, এবং আরও কয়েকটি সংস্থার একই পরিণতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ট্রাম্পের ব্যাখ্যা

ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তি, কেন্দ্রীয় সরকারের আকার অত্যন্ত “স্ফীত” হয়ে পড়েছে, যার ফলে বিশাল অঙ্কের অর্থ অপচয় হচ্ছে। সরকার গত বছর ৩৬ লাখ কোটি ডলার ঋণগ্রস্ত ছিল এবং বাজেট ঘাটতি ছিল ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলার। তাই ব্যয় সংকোচন ও প্রশাসনিক সংস্কারের অংশ হিসেবে ছাঁটাই ও বাজেট কাটছাঁট করা হয়েছে।

বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া

কংগ্রেসের রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে সমর্থন করলেও ডেমোক্রেটিক পার্টি তীব্র বিরোধিতা করছে। বিরোধীদের মতে, প্রশাসনিক ব্যয় কমানোর নামে হাজার হাজার সরকারি কর্মচারীর জীবিকা হুমকির মুখে ফেলা হচ্ছে, যা অমানবিক।

ভুক্তভোগীদের দুর্দশা

হঠাৎ এই গণছাঁটাই মেনে নিতে পারছেন না চাকরিচ্যুত সরকারি কর্মীরা। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সেনা সদস্য নিক গিয়োইয়া, যিনি ১৭ বছর সেনাবাহিনীতে থাকার পর সরকারি সংস্থা ইকোনমিক রিসার্চ সার্ভিসে যোগ দিয়েছিলেন, তিনিও চাকরি হারিয়েছেন।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“আমি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় দেশের সেবায় ব্যয় করেছি। কিন্তু আজ সেই রাষ্ট্রই আমার সঙ্গে বেঈমানি করল।”

তিনি আরও বলেন,
“আমার মতো হাজার হাজার কর্মী চাকরি হারিয়েছেন বা বাধ্য হয়েছেন ছেড়ে দিতে। মানুষের জীবন-জীবিকা নিয়ে এভাবে খামখেয়ালিপনা করা উচিত নয়।”

আরও ১ লাখ ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা

সরকারি কর্মচারী ইউনিয়ন ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফেডারেল এমপ্লয়িজ জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ২০ লাখ ৩০ হাজার সরকারি কর্মী কাজ করছেন, এবং চলতি বছর কমপক্ষে ১ লাখ কর্মী ছাঁটাই

 

শেয়ার করুন