
অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগ দাবিতে লিফলেট বিতরণ করেছেন লালমনিরহাটের পাটগ্রামের সরকারি জসমুদ্দিন কাজী আব্দুল গণি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুকিব মিয়া।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগ দাবিতে আওয়ামী লীগের লিফলেট বিতরণ করেন তিনি। মুকিব মিয়া বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের ৩১তম ব্যাচের কর্মকর্তা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তিনি ছাত্রলীগের সোহাগ-নাজমুল কমিটির গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
মুকিব মিয়া তার ফেসবুক প্রোফাইলে লিফলেট বিতরণের ছবি পোস্ট করেন এবং এ বিষয়ে অন্তত ১৩টি পোস্ট শেয়ার করেছেন। তার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে জানা যায়, তিনি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থক। গত ২৭ মার্চ তিনি তার প্রোফাইল ছবি হিসেবে শেখ হাসিনার একটি ছবি আপলোড করেন, যাতে লেখা ছিল, “বিজয় আসবেই।”
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্রযোজ্য চাকরিবিধি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের নির্দেশনা অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের সমালোচনা করার অনুমতি নেই। তবে মুকিব মিয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কড়া সমালোচক হিসেবে পরিচিত।
তার ফেসবুক পোস্টে বিভিন্ন সময়ে তিনি ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেছেন। ৫ আগস্টের পর তিনি ফেসবুকে পোস্ট করেন, “লোভে পাপ, পাপে ইউনূস, ইউনূস বাহিনীর নির্যাতন নাৎসি হিটলারকেও হার মানায়, ইউনূসের নাৎসি বাহিনীর ছোবল থেকে রেহাই পেল না শিক্ষার্থীরা, বাংলাদেশকে গৃহযুদ্ধে ঠেলে দিতে মব সংস্কৃতি চালু করেছে অবৈধ ইউনূস সরকারের উপদেষ্টারা। জাতিকে প্রস্তুত হতে হবে। অরাজকতা রুখতে হবে, বিয়ে করতে, প্রেম করতেও ট্যাক্স দিতে হবে ইউনূসকে কারণ সে সুদি কারবারি, ইউনূস ঠেলা সামলা, জঙ্গি ইউনূসের দিন শেষ।”
এসব পোস্টকে ২০১৮ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার ৩(খ) ধারা অনুযায়ী আচরণ লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করে গত ২০ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ মুকিব মিয়ার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করেছে। তাকে কেন চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে না, তা ১০ দিনের মধ্যে জানাতে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনে ব্যক্তিগত শুনানিতে ইচ্ছুক কিনা, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
মুকিব মিয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সময় টানা ১০ বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরে কর্মরত ছিলেন। তার সহকর্মীরা জানান, সে সময়েও তিনি নিয়মিত আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে অংশ নিতেন।
সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯-এর ২৫ (১) ধারায় বলা হয়েছে, “সরকারি কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দলের বা রাজনৈতিক দলের কোনো অঙ্গসংগঠনের সদস্য হতে অথবা অন্য কোনোভাবে যুক্ত হতে পারবেন না অথবা বাংলাদেশ বা বিদেশে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে বা কোনো প্রকারের সহায়তা করতে পারবেন না।” এ ধারা লঙ্ঘনের শাস্তি চাকরিচ্যুতি।
আওয়ামী লীগের পতনের পরও দলটির কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন মুকিব মিয়া। গত ৬ অক্টোবর তাকে নিরীক্ষা অধিদপ্তর থেকে হবিগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজে বদলি করা হয়। সেখানে তিনি একদিন কাজ করার পর লালমনিরহাটের পাটগ্রামে বদলি হন।
জসমুদ্দিন কাজী আব্দুল গণি কলেজের অধ্যক্ষ মো. হাবিবুর রহমান জানান, মুকিব মিয়া গত সাড়ে তিন মাসে একবারও কলেজে আসেননি। তিনি অনলাইনে যোগদানের আবেদন করেছিলেন, যা গ্রহণ করা হয়। তবে তিনি যোগদানের হার্ডকপি জমা দেননি। সম্প্রতি তিনি ৩ মাসের অসুস্থতাজনিত ছুটি চেয়ে আবেদন করেছেন, কিন্তু চিকিৎসকের সুপারিশ, ব্যবস্থাপত্র বা অসুস্থতার প্রমাণপত্র জমা দেননি। এরপর থেকে তার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ নেই।
লিফলেট বিতরণ করে চাকরিবিধি লঙ্ঘন করেননি বলে দাবি করে মুকিব মিয়া বলেন, “ড. ইউনূস সংবিধান লঙ্ঘন করছেন, এর প্রতিবাদ করছি। আওয়ামী লীগও প্রতিবাদ করছে। তাই আওয়ামী লীগের লিফলেট আমার নেতৃত্বে বিতরণ করেছি। এতে চাকরিবিধি লঙ্ঘন হয়নি। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছে, এ দলের লিফলেট বিতরণ করা আমার অধিকার।” চাকরিতে যোগ না দেওয়ার বিষয়ে তিনি জানান, ছুটির আবেদন করেছেন এবং বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।