১৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার
১লা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুলাই বিপ্লব বইমেলায় নতুন তাৎপর্য নিয়ে এসেছে : প্রধান উপদেষ্টা

শেয়ার করুন

বাংলা একাডেমিতে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৬ বছর ধরে জাতির ঘাড়ে চেপে থাকা স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটেছে। আমাদের সাহসী তরুণদের এই অভূতপূর্ব আত্মত্যাগ বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। এই বিজয়ের ফলে নতুন বাংলাদেশ গড়ার ইস্পাত-কঠোর প্রতিজ্ঞা শক্তি পেয়েছে। যাদের মহান আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত অভ্যুত্থান, এবারের বইমেলাকে নতুন তাৎপর্য প্রদান করেছে।

শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলা একাডেমিতে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি, জুলাই মাসে ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানে যারা প্রাণ দিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন, তাদের সবাইকে। এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য হলো, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান এবং তার মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গঠনের প্রতিজ্ঞা।”

ড. ইউনূস বলেন, “একুশের অর্থ সবসময়ই ছিল জেগে ওঠা, আত্মপরিচয়ের সাথে মুখোমুখি হওয়া এবং সংগ্রাম অবিরত চালিয়ে যাওয়া। এবারের একুশের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নতুন দিগন্তের দিকে এগিয়ে চলেছি।”

তিনি আরও বলেন, “বরকত, সালাম, রফিক, জাব্বারের বুকের রক্তে যে অঙ্গীকার ছিল, তার ভিতর দিয়েই জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান নিশ্চিত হয়েছিল। অর্ধশতাব্দী পর সেই বিস্ফোরণ গণঅভ্যুত্থান হয়ে দেশ পাল্টে দিয়েছে।”

“একুশ আমাদের পথ দেখায়। একুশের টান প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিস্তৃত হয়েছে এবং তা গভীরতর হয়েছে। ছাত্র-জনতা অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে। আমাদের তরুণরা রাস্তায় তাদের স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা এবং দাবিগুলি অটল দৃঢ়তায় তুলে ধরেছে, যা এখন ঐতিহাসিক দলিলে রূপান্তরিত হয়ে গেছে।”

ড. ইউনূস বইমেলায় শিক্ষার্থীদের আঁকা ছবির প্রশংসা করে বলেন, “তাদের আঁকা ছবিগুলো মেলায় স্থান পেয়েছে, যা সুন্দরভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। বইমেলার এক অংশে যদি এসব ছবির প্রদর্শনী করা হয়, তবে দর্শকরা অনেক উপকৃত হবে।”

তিনি বলেন, “বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলা আমাদের জাতীয় জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। এর গুণগত এবং আয়োজনগত বিবর্তন ক্রমাগত চলতে থাকবে। লেখকরা বছরের পর বছর প্রস্তুতি নিয়ে বই লিখে থাকেন এবং প্রকাশকরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বই প্রকাশের জন্য প্রস্তুতি নেন।”

এছাড়া, ড. ইউনূস একুশের ভাষা আন্দোলনকে আরও গভীরতর স্বাধিকার আন্দোলন হিসেবে দেখার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, “আমরা কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের সৃজনশীলতার জন্য স্বীকৃতি দিতে পারি, এবং শহর ও গ্রামের মানুষের জন্য যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন তাদের জন্য আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে পারি।”

“আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদানের জন্যও স্বীকৃতি দিতে পারি, যারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কৃতিত্ব দেখাচ্ছেন। একুশের দিনে তাদের আমরা স্মরণ করতে চাই,” বলেন তিনি।

বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।

 

শেয়ার করুন