১৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার
১লা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশে প্রতি লাখে ক্যান্সারে আক্রান্ত ১০৬, বছরে নতুন রোগী ৫৩ জন

শেয়ার করুন

ক্যান্সারের আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বর্তমানে ১০৬ জন। এছাড়া, প্রতি বছর নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন ৫৩ জন। মোট মৃত্যুর ১২ শতাংশই ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী। বাংলাদেশে ৩৮ ধরনের ক্যান্সারের মধ্যে স্তন, মুখ, পাকস্থলী, শ্বাসনালি এবং জরায়ু মুখের ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) একটি সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণায় এই চিত্র উঠে এসেছে, যা দেশে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সারের সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছে। ১ ফেব্রুয়ারি, বিএসএমএমইউর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে ‘বাংলাদেশে ক্যান্সারের বোঝা: জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এই গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।

গবেষণার প্রধান গবেষক ও পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. খালেকুজ্জামান জানান, ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। তবে বাংলাদেশে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি (পিবিসিআর) না থাকায় প্রতিবেশী দেশগুলোর তথ্যের উপর ভিত্তি করে ক্যান্সারের পরিস্থিতি অনুমান করতে হয়। এটি ক্যান্সারের সঠিক পরিস্থিতি জানা এবং এর সমাধানের জন্য একটি বড় বাধা। তাই জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি প্রতিষ্ঠা জরুরি হয়ে পড়েছিল, যার ফলস্বরূপ এই গবেষণা পরিচালিত হয়।

গবেষণায় জানা যায়, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় এই গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। ২ লাখ মানুষের ওপর পরিচালিত এই গবেষণায় ৩৮ ধরনের ক্যান্সার শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে প্রতি লাখে ১০৬ জন ক্যান্সারে আক্রান্ত। ৯৩ শতাংশ রোগী বয়স ১৮ থেকে ৭৫ বছর বয়সী, ২.৪ শতাংশ শিশুরা এবং ৫.১ শতাংশ রোগী ৭৫ বছরের উপরে।

গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে ৫টি প্রধান ক্যান্সার হলো স্তন, মুখ, পাকস্থলী, শ্বাসনালি এবং জরায়ু মুখের ক্যান্সার। পুরুষদের প্রধান ক্যান্সারগুলো হল শ্বাসনালি, পাকস্থলী, ফুসফুস, মুখ ও খাদ্যনালির ক্যান্সার, আর নারীদের মধ্যে প্রধান ক্যান্সারগুলো হলো স্তন, জরায়ুমুখ, মুখ, থাইরয়েড এবং ওভারি। পুরুষ ক্যান্সার রোগীদের ৭৫.৮ শতাংশ ধুমপায়ী, এবং ৪০.৫ শতাংশ তামাক, জর্দা, বা ধোঁয়াহীন পান সেবন করেন। নারীদের মধ্যে ৬০.৬ শতাংশ ধোঁয়াহীন পান, জর্দা বা তামাক সেবনকারী। এছাড়াও ৪৬ শতাংশ ক্যান্সার রোগীর মধ্যে ই-তামাক ব্যবহারের সম্পর্ক রয়েছে।

চিকিৎসা প্রসঙ্গে, গবেষণায় জানা গেছে যে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ কম্বাইন্ড চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন, তবে ৭.৪ শতাংশ রোগী কোনো চিকিৎসা নেননি। দেশে মোট মৃত্যুর ১২ শতাংশ ক্যান্সারের কারণে হয়ে থাকে, যার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ফুসফুস, শ্বাসনালি এবং পাকস্থলীর ক্যান্সার। প্রতি বছর প্রতি লাখে ৫৩ জন নতুন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়।

এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান, সভাপতিত্ব করেন বিএসএমএমইউ’র ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম, এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার এবং অধ্যাপক ডা. সৈয়দ জাকির হোসেন।

 

শেয়ার করুন