১৬ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার
৩১শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১ টাকায় রোগী দেখেন তিন ডাক্তার বোন

শেয়ার করুন

তিন বোনই ডাক্তার, যারা চিকিৎসা সেবার জন্য মাত্র এক টাকা ভিজিট গ্রহণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সুমাইয়া বিনতে মোজাম্মেল, আয়েশা সিদ্দিকা, এবং ফারজানা মোজাম্মেল নামের এই তিন বোনের উদ্যোগ রাজশাহী থেকে শুরু করে সারা দেশে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

২০২৩ সালে ডা. সুমাইয়া বিনতে মোজাম্মেল তার বাবার পরামর্শে মাত্র এক টাকার বিনিময়ে রোগী দেখা শুরু করেন। এই উদ্যোগ দ্রুতই রাজশাহীতে আলোচিত হয়। পরে তার অন্য দুই বোন, ডা. আয়েশা সিদ্দিকা ও ডা. ফারজানা মোজাম্মেলও এতে যুক্ত হন। তিন বোন রাজশাহীর সাহেববাজারে নিজ বাসার নিচে চেম্বারে পর্যায়ক্রমে অসহায় রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন।

  • ডা. সুমাইয়া বিনতে মোজাম্মেল: ২০২০ সালে ইসলামি ব্যাংক মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন।
  • ডা. আয়েশা সিদ্দিকা: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস পাস করা একজন জেনারেল ফিজিশিয়ান।
  • ডা. ফারজানা মোজাম্মেল: একজন ডেন্টাল সার্জন।

তাদের বাবা মীর মোজাম্মেল আলী মেয়েদের এই মহতী উদ্যোগের মূল অনুপ্রেরণা। তিনি জানান, তার স্বপ্ন ছিল মেয়েরা অসহায় মানুষের জন্য কাজ করবে। তাদের বাবার ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে তিন বোন চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

  • ডা. সুমাইয়া বলেন, “আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থাকি। যদি জটিল কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে রোগীদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে রেফার করি।”
  • তাদের চেম্বারে আসা রোগীরা বিভিন্ন অসুখের চিকিৎসা নিয়ে উপকৃত হচ্ছেন।
  • দাঁতের সমস্যা থেকে শুরু করে কোমর ব্যথা বা সাধারণ অসুখ—সব ক্ষেত্রেই তারা সহায়তা করছেন।

এক টাকা ভিজিটের বিষয়ে ডা. সুমাইয়া বলেন, “আমার বাবা বিনামূল্যে রোগী দেখতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি প্রতীকি মূল্য হিসেবে এক টাকা রাখা শুরু করি। এটি মূলত রোগীদের প্রতি সম্মানের প্রতীক।

তিন বোন “দ্য ফাইভ ফাউন্ডেশন” নামে একটি সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদা—খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, এবং চিকিৎসা নিয়ে কাজ করছেন। তবে এই কাজ পুরোপুরি তাদের নিজস্ব অর্থায়নে চলছে।

  • শামীমা খাতুন (৩৫) বলেন, “সাত মাস ধরে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছি। ভালোই সেবা পাচ্ছি। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তারা সঠিক ওষুধ দেন।”
  • রফিকুল ইসলাম (১৮) বলেন, “দাঁতের চিকিৎসা করাতে এসে অনেক উপকার পেয়েছি।”
  • নূর নাহার (৪৫) জানান, “কোমরের ব্যথার জন্য চিকিৎসা নিচ্ছি। ওষুধ ও ব্যায়াম মেনে চলায় অনেক উপকার পাচ্ছি।”

তিন বোনের এই উদ্যোগ শুধু রাজশাহীতেই নয়, গোটা বাংলাদেশে মানবতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে উঠেছে। তাদের কার্যক্রম প্রমাণ করে, ইচ্ছাশক্তি ও মানবিকতার সমন্বয়ে যে কোনো মানুষ অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে পারে।

শেয়ার করুন