
চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মাঝামাঝি সময়ে এসে সরকার শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করেছে। তবে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সিগারেটের চার স্তরেই মূল্য ও করহার বৃদ্ধি একটি ইতিবাচক ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি)।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনটিটিপি জানায়, তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও করহার মুদ্রাস্ফীতি অনুযায়ী বৃদ্ধি করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তবে এতদিন বিষয়টি উপেক্ষিত ছিল, যার ফলে জনস্বাস্থ্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপে মূল্য ও কর বৃদ্ধিতে মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে, যা জনস্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
সিগারেটের কর বৃদ্ধির বিস্তারিত
নিম্নস্তরের সিগারেটের করহার ৬০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ শতাংশ করা হয়েছে, যা বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। কারণ দেশে সিগারেট ভোক্তাদের ৭০ শতাংশের বেশি এই স্তরের ভোক্তা।
মধ্যম স্তরের সিগারেটের (১০ শলাকা) মূল্য ১০ টাকা বৃদ্ধি করে ৮০ টাকা করা হয়েছে।
উচ্চ স্তরের সিগারেটের (১০ শলাকা) মূল্য ২০ টাকা বৃদ্ধি করে ১৪০ টাকা করা হয়েছে।
অতিউচ্চ স্তরের সিগারেটের (১০ শলাকা) মূল্য ২৫ টাকা বৃদ্ধি করে ১৮৫ টাকা করা হয়েছে।
এই তিন স্তরের করহারও ৬৫.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ শতাংশ করা হয়েছে।
বিড়ি ও ধোঁয়াহীন তামাক পণ্যের করহারে পরিবর্তনের অভাব
বিএনটিটিপি এই পদক্ষেপের প্রশংসা করলেও বিড়ি এবং ধোঁয়াহীন তামাকজাত পণ্যের ক্ষেত্রে করহারে কোনো পরিবর্তন না করায় হতাশা প্রকাশ করেছে। কারণ এসব পণ্যের ভোক্তার সংখ্যা বেশি এবং স্বাস্থ্য ক্ষতির মাত্রাও গুরুতর।
ত্রুটিপূর্ণ কর ব্যবস্থার সমালোচনা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বিএনটিটিপির আহ্বায়ক ড. রুমানা হক জানান, কর বৃদ্ধির পদক্ষেপ ইতিবাচক হলেও ত্রুটিপূর্ণ অ্যাডভেলোরেম পদ্ধতি (মূল্যের ভিত্তিতে কর) বহাল রয়েছে। সুনির্দিষ্ট কর ব্যবস্থা চালু করা হলে তামাকের ব্যবহার কমানো ও সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি উভয়ই সহজ হতো।
তিনি আরও বলেন, কর ফাঁকি রোধে পাইকারি, খুচরা বিক্রেতা, ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটরদের নিবন্ধনের আওতায় আনতে হবে। এছাড়া স্বাস্থ্যকর খাবারে কর কমানোরও আহ্বান জানান তিনি।
নতুন অধ্যাদেশের কার্যকারিতা
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বৃহস্পতিবার রাতে “মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫” এবং “দি এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫” নামে দুটি অধ্যাদেশ জারি করেছে, যা সঙ্গে সঙ্গেই কার্যকর হয়েছে।