১৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার
১লা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাস্টিন ট্রুডোর বিদায় ও কানাডায় পরিবর্তনের হাওয়া

শেয়ার করুন

জাস্টিন ট্রুডো: কানাডার রাজনৈতিক অধ্যায়ের এক পরিবর্তন

জাস্টিন ট্রুডোর রাজনৈতিক যাত্রা নাটকীয় হলেও তা নতুন নয়। ১৯৭১ সালে জন্মগ্রহণ করা ট্রুডো রাজনীতির পরিবেশে বেড়ে উঠেছিলেন, কারণ তার বাবা পিয়েরে ট্রুডো তখন কানাডার প্রধানমন্ত্রী। তবে রাজনৈতিক উত্তরাধিকার থাকা সত্ত্বেও তিনি শুরুতে শিক্ষকতা পেশা বেছে নেন।

২০০৮ সালে ৩৬ বছর বয়সে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে লিবারেল পার্টিকে তৃতীয় স্থান থেকে প্রথম স্থানে নিয়ে আসেন। ২০১৫ সালে কানাডার সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং পরবর্তী দুই নির্বাচনে জয়লাভ করে টানা তিনবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

চ্যালেঞ্জ ও পতনের সূচনা

দীর্ঘ ৯ বছরের শাসনকালে ট্রুডো বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। তার শাসনকালে বিশেষত ২০১৬ সালের কার্বন কর ব্যবস্থা, ২০১৯ সালের নৈতিকতা কমিশনের তদন্ত, এবং কোভিড-১৯ মহামারিতে কঠোর আইন প্রয়োগ— এসব নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। অর্থনৈতিক সংকট, বেকারত্ব, এবং আবাসন সংকটের মতো বিষয়গুলো তার জনপ্রিয়তায় ধাক্কা দেয়।

২০২১ সালের আগাম নির্বাচনে তিনি লিবারেল পার্টিকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করাতে ব্যর্থ হন এবং ক্ষুদ্র দলের সমর্থন নিয়ে ভঙ্গুর সরকার গঠন করেন। তার শাসনকালে অভিবাসননীতি এবং কর ব্যবস্থা নিয়ে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ আরও তীব্র হয়।

কনজারভেটিভ দলের উত্থান

কনজারভেটিভ দলের নেতা পিয়েরে পলিয়েভর ট্রুডোর ব্যর্থতাগুলোকে জনগণের সামনে তুলে ধরে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার কর কমানোর প্রতিশ্রুতি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষার উদ্যোগগুলো অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো রক্ষণশীল নেতাদের সঙ্গে ট্রুডোর সম্পর্ক জটিল আকার ধারণ করে। ট্রাম্প কানাডা থেকে আমেরিকায় বেআইনি অনুপ্রবেশ এবং মাদক রোধে কঠোর অবস্থান নেন, যা কানাডার অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি তৈরি করে।

পদত্যাগ ও ভবিষ্যতের কৌশল

ট্রুডোর সাম্প্রতিক পদত্যাগের ঘোষণা আসন্ন নির্বাচনের আগে দলের জন্য নতুন নেতৃত্ব তৈরির কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডের নাম শোনা যাচ্ছে। যদিও তিনি ট্রুডোর কিছু নীতি নিয়ে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছিলেন, তবে তার নেতৃত্বে লিবারেল পার্টি কিছুটা আস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারে।

আগামীর সম্ভাবনা

যদি পিয়েরে পলিয়েভর প্রধানমন্ত্রী হন, তাকে ট্রুডোর রেখে যাওয়া অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে হবে। বিশেষত অভিবাসন, মূল্যস্ফীতি, এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মতো বিষয়ে তার কঠোর নীতিগুলো কার্যকর হলেও দীর্ঘমেয়াদে তা কানাডার আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকে প্রভাবিত করতে পারে।

জাস্টিন ট্রুডো কানাডার জন্য জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার, এবং উদারনীতির এক যুগ তৈরি করলেও সময়ের সাথে তার জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে। ৯ বছরের শাসনামল ছিল চ্যালেঞ্জিং, কিন্তু তার উত্তরাধিকারকে পুরোপুরি ব্যর্থ বলা যাবে না। এটি কেবল পরিবর্তনের হাওয়া, যা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রায়শই ঘটে। এখন দেখার বিষয়, নতুন নেতৃত্ব কীভাবে কানাডার ভবিষ্যৎ রচনা করে।

 

শেয়ার করুন