
নতুন আতঙ্ক: এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাব এবং প্রতিরোধে সতর্কতা প্রয়োজন
চার বছর আগে করোনাভাইরাসের মহামারি সারা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। সেই বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার স্মৃতি মানুষের মন থেকে মুছে যায়নি। এর মধ্যেই চীনে নতুন একটি ভাইরাস হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) সংক্রমণ সৃষ্টি করেছে, যা নতুন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এইচএমপিভি: একটি পরিচিত ভাইরাস
এইচএমপিভি একটি পরিচিত ভাইরাস যা প্রথম ২০০১ সালে নেদারল্যান্ডে শনাক্ত হয়। এটি প্যারামিক্সোভিরিডি ফ্যামিলিভুক্ত এবং মূলত শীতকালে বা ঋতু পরিবর্তনের সময় সক্রিয় হয়।
আক্রান্তরা সাধারণত ভোগে: সর্দি-কাশি, জ্বর, গলা ব্যথা ও ক্লান্তি।
ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী: শিশু, বৃদ্ধ, এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল।
তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি শ্বাসযন্ত্রের গভীরতর অংশে সংক্রমণ ঘটিয়ে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, বা শ্বাসকষ্টের মতো গুরুতর রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
বর্তমান প্রাদুর্ভাব
২০২৪ সালের শেষ দিকে চীনে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে এবং ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে এর প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।
চীনে পরিস্থিতি: হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ভিড়। বিশেষত শিশুদের মধ্যে সংক্রমণের হার বেশি।
ভারতে প্রথম শনাক্ত: ৬ জানুয়ারি দুই শিশুর শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা: এটি মিউটেশনের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।
কীভাবে ছড়ায় এইচএমপিভি?
সংক্রমিত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকে।
ভাইরাসযুক্ত জিনিসপত্র বা পৃষ্ঠ স্পর্শ করার পর হাত না ধুয়ে মুখ, চোখ বা নাকে হাত দিলে।
সাধারণত সংক্রমণের ৩-৭ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়।
প্রতিরোধে কী করণীয়?
এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো টিকা নেই, তাই প্রতিরোধই মূল অস্ত্র।
1. ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা:
নিয়মিত সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া।
নাকে-মুখে-চোখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকা।
2. মাস্ক ব্যবহার করা:
ভিড়যুক্ত এলাকায় মাস্ক পরা।
অসুস্থ হলে ঘরে থাকা।
3. হাঁচি-কাশি ঢেকে নেওয়া:
রুমাল বা টিস্যু দিয়ে মুখ ঢেকে হাঁচি-কাশি করা।
ব্যবহৃত টিস্যু যথাযথভাবে ফেলে দেওয়া।
4. পর্যাপ্ত তরল ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ।
এইচএমপিভি শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা
পরীক্ষা: RT-PCR, ELISA বা Immunofluorescence পদ্ধতিতে ভাইরাসটি শনাক্ত করা সম্ভব।
চিকিৎসা: লক্ষণভিত্তিক। জ্বর বা ব্যথা উপশমের ওষুধ, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, এবং তরল গ্রহণ।
গুরুতর লক্ষণ: শ্বাসকষ্ট, তীব্র জ্বর, বা পানিশূন্যতা হলে অবিলম্বে হাসপাতালে যেতে হবে।
ডা. কাকলী হালদারের পরামর্শ
“সঠিক তথ্য এবং সচেতনতা এই ভাইরাস প্রতিরোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অতিরিক্ত আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই, বরং সাবধানতা অবলম্বন করাই যথেষ্ট।”
এইচএমপিভি নতুন কোনো ভাইরাস নয়, তবে এর বর্তমান প্রাদুর্ভাব উদ্বেগের কারণ। সচেতনতা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।