
জুলাই অভ্যুত্থানের পর নতুন সরকারের নির্দেশে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। ২০২৪ সালের অভ্যুত্থান এবং এর সামাজিক-রাজনৈতিক প্রভাব নতুন পাঠ্যবইগুলোতে তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি, পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে চালু হওয়া সৃজনশীল শিক্ষাক্রম বাদ দিয়ে আবার ২০১২ সালের কারিকুলাম চালু করা হয়েছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানিয়েছে, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের নতুন পাঠ্যবই ১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরিবর্তিত বইগুলোতে স্থান পেয়েছে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নানা ঘটনা, ছবি, কার্টুন এবং গ্রাফিতি।
প্রধান পরিবর্তনগুলো:
1. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি অতিরিক্ত বন্দনা বাদ
শেখ মুজিবের সঙ্গে শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সমানভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
2. স্বাধীনতার ঘোষণার নতুন উপস্থাপন
নবম ও দশম শ্রেণির বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে ২৬ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
3. জুলাই অভ্যুত্থানের বিশদ বিবরণ
ষষ্ঠ শ্রেণির চারুপাঠ বইয়ে কার্টুন এবং গ্রাফিতির মাধ্যমে আন্দোলনের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।
পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে “আমরা তোমাদের ভুলব না” অধ্যায়ে ২০২৪ সালে শহীদ হওয়া শিক্ষার্থী আবু সাঈদ ও মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ঘটনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
4. আওয়ামী লীগের শাসনব্যবস্থা সমালোচনা
বইগুলোতে বলা হয়েছে, পূর্ববর্তী সরকারের শাসনব্যবস্থা ছিল দমনমূলক। গুম, খুন, এবং আর্থিক দুর্নীতির ঘটনাগুলো বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
5. নতুন সাহিত্য ও কবিতা
সপ্তম শ্রেণির বইয়ে “সিঁথি” নামে একটি কবিতা যুক্ত করা হয়েছে, যা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে রচিত।
6. জাতির পিতার অধ্যায় বাদ
তৃতীয় শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে ‘আমাদের জাতির পিতা’ অধ্যায় বাদ দিয়ে নতুন অধ্যায় “আমাদের চার নেতা” সংযোজন করা হয়েছে।
পরিবর্তনের উদ্দেশ্য:
এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান জানান, পাঠ্যবই থেকে রাজনৈতিক অতিকথন বাদ দেওয়া হয়েছে এবং নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে অভ্যুত্থানের ঘটনাগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এই পরিবর্তনগুলোতে রাজনৈতিক ইতিহাসের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপিত হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের ঐতিহাসিক সচেতনতা বাড়াতে সহায়ক হবে।