১৯শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার
৩রা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চাঁদপুর সেভেন মার্ডারের ঘটনায় মামলা

শেয়ার করুন

চাঁদপুরের হাইমচরের ঈশানবালায় মেঘনা নদীতে আল বাখারা নামক জাহাজ থেকে চালকসহ সাতজনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা করেছেন জাহাজ মালিক মাহাবুব মুর্শেদ। মামলার সাক্ষী হিসেবে ৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে হাইমচর থানার ওসি মহিউদ্দিন সুমন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২২ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে ২৩ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যে মনিপুর টেক খাল পাড় সংলগ্ন এলাকায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। ১৯ ডিসেম্বর জাহাজের কর্মচারীদের খোরাকির জন্য মাষ্টার গোলাম কিবরিয়া ৩০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। ২২ ডিসেম্বর সকালে জাহাজটি চট্টগ্রাম কাফকো জেটি থেকে ইউরিয়া সার বোঝাই করে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়। ২২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ড্রাইভার সালাউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ হলেও পরদিন সকালে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়, যা ঘটনার সূত্রপাত বলে ধরা হচ্ছে।

জাহাজ মালিক মাহাবুব মুর্শেদ বলেন, “আমরা ৬ জন মালিকের মধ্যে একজন। আমি ন্যায়বিচার চাই এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে চাই।”

তদন্ত কার্যক্রম

চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় জানিয়েছেন, সেভেন মার্ডারের ঘটনায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। একই সঙ্গে শ্রম মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসনের পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, “লাশগুলো আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহতদের পরিবারকে জেলা প্রশাসন ২০ হাজার এবং নৌ পুলিশ ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।”

স্থানীয়দের অভিযোগ ও নিরাপত্তার ঘাটতি

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মনিপুর টেক এলাকায় আগে ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের নজির নেই। জাহাজে সিসি ক্যামেরা, ভিএইচএফ যন্ত্রপাতি, স্কট বা পাইলটের অভাব ছিল, যা নিরাপত্তার বড় ঘাটতি।

চাঁদপুর অঞ্চলের নৌ পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান জানান, প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, নেশাজাতীয় দ্রব্য দিয়ে কর্মচারীদের অচেতন করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। আহত জুয়েল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সন্দেহভাজন একজন সেদিন ছুটিতে ছিলেন। তদন্তে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসছে।

আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা মো. হারুন দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার, প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনসহ জাহাজের নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে ২৬ ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌযান ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছেন।

নিহতদের তালিকা

নিহতরা হলেন:

মাষ্টার গোলাম কিবরিয়া (৬৫)

লস্কর শেখ সবুজ (৩৫)

সুকানি আমিনুল মুন্সী

লস্কর মো. মাজেদুল (১৬)

লস্কর সজিবুল ইসলাম (২৬)

ইঞ্জিন চালক মো. সালাউদ্দিন (৪০)

বাবুর্চি কাজী রানার (২৪)

আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন জুয়েল।

তদন্ত কর্মকর্তারা আশা করছেন, দ্রুত এই রহস্যময় হত্যাকাণ্ডের সমাধান হবে।

 

শেয়ার করুন