
ঢাকার কাছাকাছি ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের মতে বড় এক ভূমিকম্পের আগাম বার্তা। তারা বলছেন, বড় ভূমিকম্পের আগে এ ধরনের মাঝারি মাত্রার কম্পন ‘ফোরশক’ হিসেবে দেখা যায়। মাত্র কয়েক সেকেন্ড বেশি স্থায়ী হলে রাজধানীতে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটতে পারত।
রাজউকের সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, ঢাকায় ২১ লাখের বেশি ভবনের মধ্যে বিপুল সংখ্যকই ঝুঁকিপূর্ণ। বেশিরভাগ ভবন নির্মাণ হয়েছে বিল্ডিং কোড না মেনে বা দুর্বল মাটির ওপর। বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে লাখ লাখ মানুষ মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভূমিকম্পপ্রবণ বড় শহরগুলোর একটি। কারণ—
-
নগরজুড়ে পুরোনো ও অননুমোদিত ভবনের আধিক্য
-
সরু রাস্তা ও পর্যাপ্ত খোলা জায়গার অভাব
-
মাটির গঠন অত্যন্ত দুর্বল
-
মধুপুর, ডাউকি, সাগাইংসহ সক্রিয় ফল্ট লাইনের উপস্থিতি
রাজউকের তথ্য অনুযায়ী, মধুপুর ফল্টে ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকার ৪০–৬৫ শতাংশ ভবন ধসে পড়তে পারে। এতে ২–৫ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। সাত বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে ৭২ হাজার ভবন ভেঙে পড়বে বলেও পূর্বের জরিপে বলা হয়।
বুয়েটের অধ্যাপক মেহেদি আনসারী বলেন, “গতকালের ভূমিকম্পকে ফোরশক বলা যায়। বড় ভূমিকম্প সাধারণত ১৫০ বছর পরপর ফিরে আসে। ১৯৩০ সালের পর বড় কোনো ভূমিকম্প হয়নি। তাই সম্ভাবনা বাড়ছে।”
অধ্যাপক হুমায়ুন আখতারও সতর্ক করে বলেন, “প্লেটের চাপ মুক্ত হওয়ার ধাপ চলছে, সামনে আরও বড় ভূমিকম্প হতে পারে।”
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ঢাকায় আশ্রয়ের মতো খোলা জায়গা প্রায় নেই। দুর্যোগে মানুষ বাইরে বের হলেও কোথায় দাঁড়াবে সেই জায়গা নেই বললেই চলে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ঢাকার আশেপাশে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প ডিজিটাল পর্যবেক্ষণ শুরুর পর এটিই সবচেয়ে বড়। বড় কম্পনের পর পরাঘাতের ঝুঁকি থাকলেও এখনো বড় কোনো আফটারশক হয়নি।
বিশেষজ্ঞদের সর্বশেষ পরামর্শ—
-
সব ভবন বাধ্যতামূলকভাবে পরীক্ষা
-
বিল্ডিং কোড কঠোরভাবে প্রয়োগ
-
নিয়মিত ভূমিকম্প মহড়া
-
শহরে বড় পরিসরে খোলা জায়গা তৈরি
-
সচেতনতা বাড়ানো
অন্যথায় শক্তিশালী ভূমিকম্পে রাজধানীতে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।
সিএনআই/২৫