
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানোর দাবিতে করা আপিলের রায় আজ বৃহস্পতিবার ঘোষণা করবেন আপিল বিভাগ। পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, মামলাটি আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ১ ও ২ নম্বর ক্রমিকে রাখা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের বেঞ্চ রায় ঘোষণা করবেন। এর আগে টানা দশ দিনের শুনানি শেষে গত ১১ নভেম্বর আদালত আজকের দিন নির্ধারণ করেন।
রাষ্ট্রপক্ষ ও আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীরা আশা প্রকাশ করেছেন যে আপিল বিভাগের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল হতে পারে। তবে তারা মনে করছেন, এই ব্যবস্থা ফিরলেও আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তী নির্বাচন থেকে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা কার্যকর করার আবেদনও জানিয়েছেন তারা। তাদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ব্যবস্থা চালুর মতো পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি।
বিএনপি মহাসচিবের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। জামায়াতের আপিলের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। পাঁচ নাগরিকের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
আইনজীবী শিশির মনির জানিয়েছেন, সংসদ ভেঙে দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের বিধান থাকায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়া বাস্তবে অসম্ভব। তিনি আশাবাদী, পরবর্তী অর্থাৎ চতুর্দশ সংসদ নির্বাচন এই ব্যবস্থার অধীনে অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে ২৭ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন শুনানি শেষে আপিল বিভাগ আপিলের অনুমতি দেন। এরপর বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার পৃথক আপিল করেন। গত ২১ অক্টোবর থেকে ধারাবাহিকভাবে শুনানি হয় ২২, ২৩, ২৮, ২৯ অক্টোবর এবং ২, ৪, ৫, ৬ ও ১১ নভেম্বর।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ১৯৯৬ সালে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্ত হয়। ওই ব্যবস্থার অধীনে ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে ২০১১ সালে আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে এ ব্যবস্থা বাতিল করে রায় দেয়, যা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করা হয়। যদিও রায়ের পর্যবেক্ষণে তখনকার আদালত দশম ও একাদশ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থায় আয়োজনের সুযোগ রাখে। পরে পূর্ণাঙ্গ রায়ে সেই অংশটি বাদ পড়ায় সমালোচনা ও বিতর্ক তৈরি হয়।
সেই বিতর্কিত রায়ের ভিত্তিতেই পরপর তিনটি জাতীয় নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত হয়। গত বছরের ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের সেই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হয়, যার চূড়ান্ত রায় আজ।
সিএনআই/২৫