
ঢাকায় সম্প্রতি বাসাবাড়িতে সাপের উপদ্রব আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। রাজধানীর উত্তরার একটি বহুতল ভবনের পঞ্চম তলায় এক পরিবারের সদস্য ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখেন, বিছানার পাশে প্যাঁচানো অবস্থায় একটি সাপ। পরে বাংলাদেশ অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএডব্লিউএ) টিম এসে সেটি উদ্ধার করে।
শুধু উত্তরা নয়—বনশ্রী, মেরাদিয়া, আফতাবনগর, মোহাম্মদপুর, বছিলা, উত্তরখান, দক্ষিণখান, এমনকি নিকেতন ও ক্যান্টনমেন্টের মতো এলাকাতেও সাপ দেখা যাচ্ছে। উদ্ধার হওয়া সাপগুলোর মধ্যে রয়েছে ভয়ংকর বিষধর খৈয়া গোখরা (ইন্ডিয়ান কোবরা), পদ্মগোখরা (মনোকেল্ড কোবরা), ওয়ানস ক্রেট ও রাসেল ভাইপার। ইতোমধ্যে মিরপুরে এক নারী সাপের দংশনে আহত হয়েছেন।
বিএডব্লিউএ–এর তথ্য অনুযায়ী, গত তিন মাসে রাজধানীজুড়ে ৩২২টি সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে তিনটি সাপ উদ্ধার করা হচ্ছে, যার ৯৯ শতাংশই বিষধর প্রজাতির।
সংগঠনটির আহ্বায়ক আদনান আজাদ বলেন, “আমরা প্রাণী সুরক্ষায় কাজ করি। সাপের উপস্থিতির খবর পেলেই আমাদের টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়।” তাঁর ভাষায়, ঢাকায় উদ্ধার হওয়া সাপগুলোর বেশির ভাগই পদ্মগোখরা। এরা পানিপ্রেমী প্রজাতি; পুরোনো জলাশয় ভরাট হয়ে ভবন নির্মাণ হওয়ায় তারা এখন শুকনো আশ্রয় খুঁজে মানুষের বাড়িতে ঢুকছে।
তিনি জানান, অক্টোবর মাস পদ্মগোখরার প্রজননকাল। এই সময় ডিম ফেটে বাচ্চা সাপ বের হয়, যেগুলোতেও সমানভাবে বিষ থাকে। ফলে বর্তমানে সতর্কতা বাড়ানো জরুরি।
বিএডব্লিউএ–এর রেসকিউ টিম জানায়, রাত ২টা থেকে ৫টার মধ্যে তাদের বেশির ভাগ কল আসে, কারণ সাপ নিশাচর প্রাণী। নবম তলা ভবন থেকেও সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। বিশেষত উত্তরার ১৮ নম্বর সেক্টর, বনশ্রী, আফতাবনগর ও বছিলার মতো নতুন আবাসিক এলাকায় ঘটনা বেশি ঘটছে।
তাদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এসব এলাকায় জলাধার ও সবুজ অঞ্চল বিলুপ্ত হওয়ায় সাপ আশ্রয় খুঁজে ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়ে। ইঁদুরের উপস্থিতিও সাপ টানছে। শহরে উচ্ছিষ্ট খাবার যেখানে-সেখানে ফেলার কারণে ইঁদুর বেড়েছে, আর ইঁদুরের পেছনে আসে সাপ।
সংগঠনটি বলছে, অনেক সাপ উদ্ধার অভিযান ফেসবুকে প্রকাশ করা হয় না, যেন অযথা আতঙ্ক না ছড়ায়। তারা বাসাবাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখা, ঝোপঝাড় ছাঁটা, খাবারের বর্জ্য সঠিকভাবে ফেলা এবং সাপ দেখলে নিজে না ধরে রেসকিউ টিমে খবর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। উদ্ধার করা সাপগুলো পরবর্তীতে বন বিভাগকে জানিয়ে বনে বা নির্জন চরে অবমুক্ত করা হয়।
তবে ঢাকায় সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা সীমিত। হাতেগোনা কয়েকটি হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম রয়েছে—এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) অন্যতম।
প্রাণিবিজ্ঞানীরা বলছেন, সাপ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরীর মতে, “আমরা সাপের ভয় পাই, কিন্তু তারা ইঁদুর দমন করে পরিবেশের উপকার করে। নগরায়ণের কারণে তারা আশ্রয় হারাচ্ছে।”
তিনি পরামর্শ দেন—মশারি টানিয়ে ঘুমানো, বাড়ি পরিষ্কার রাখা, নিচতলায় অন্ধকার স্থানে সতর্ক থাকা ও রাতে আলো জ্বালিয়ে চলাফেরা করার মাধ্যমে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
সিএনআই/২৫