১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার
৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ডিজিটাল অভিযাত্রার প্রেরণাঃ যবিপ্রবি সিএসই বিভাগ

শেয়ার করুন

যবিপ্রবি প্রতিনিধি: যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই প্রযুক্তি শিক্ষা ও গবেষণায় এগিয়ে চলেছে। সেই যাত্রার মাঝে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ এক শক্ত ভিত্তি তৈরী করেছে। আজ সেখানে শুধু একাডেমিক পড়াশোনায় নয় বরং কোড লেখা থেকে শুরু করে প্রযুক্তিকে হাতে কলমে ব্যাবহার করে দেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য এবং নিজেদের মান, আধুনিকতা ও গবেষণার মাধ্যমে আলাদা পরিচিতি তৈরী করেছে।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৯ সালের সেশনে ৪ বছরের স্নাতক পাঠক্রমের মাধ্যমে পথচলা শুরু হয় এই কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের। প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল আধুনিক প্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরী করা, যাতে দেশের আইটি সেক্টরে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। পুর্বে খুবই অল্প সংখ্যক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও আজ সিএসই বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় বিভাগ গুলোর মধ্যে অন্যতম।

এই বিভাগে বর্তমানে স্নাতক, স্নাতকত্তোর-সহ সকল প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত রয়েছে প্রায় তিনশো জন শিক্ষার্থী। বর্তমানে বিভাগীয় চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ কামরুল ইসলাম। পাঠদানের সাথে সরাসরি যুক্ত আছেন দশজন অভিজ্ঞ ও বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করা শিক্ষক এবং বিদেশে স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি অর্জনের জন্য এবং গবেষণা কাজে নিযুক্ত আছেন আরোও বারো জন শিক্ষক।

এই বিভাগের শিক্ষকরা শুধু পাঠদানেই সীমাবদ্ধ নন, গবেষণাতেও রেখেছেন দৃঢ় পদচিহ্ন। ডেটা সাইন্স, মেশিন লার্নিং, আইওটি ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টে নিয়মিত গবেষণা চলছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত হচ্ছে তাঁদের কাজ। শিক্ষকদের দাবি, শিক্ষার্থীরা শুধু বই এর মধ্যে আটকে না থেকে বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানে দক্ষ হয়ে উঠুক।

যবিপ্রবির সিএসই বিভাগে রয়েছে আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব, হাই-স্পিড ইন্টারনেট সুবিধা, প্রজেক্টর ভিত্তিক স্মার্ট ক্লাসরুম। শিক্ষার্থীরা প্রোগ্রামিং, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, ডেটা সাইন্সসহ সর্বাধুনিক বিষয় গুলোর উপর হাতে কলমে প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকে। এছাড়াও গবেষণার জন্য বিশেষ ল্যাব এবং সার্ভার সুবিধা রয়েছে।

সিএসই বিভাগ সম্প্রতি “স্মার্ট ওয়াটার পাম্প” নামক একটি প্রকল্প শোকেস করেছে যা দর্শক ও বিচারকদের মুগ্ধ করেছে। অন্যদিকে শুধু পড়াশোনায় সিমাবদ্ধ না থেকে শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা,হ্যাকাথন ও সেমিনারে। যবিপ্রবির সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যেই আইসিপিসি সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে। কয়েকজন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশের সনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছে। আবার কেউ ইন্টারশীপ এর উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছে বিশ্বের সনামধন্য কোম্পানিতেও। বিভাগ খ্যাত “Synergyx 2024” নামক প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার-আপ হয়েছে। KRIUPC ২০২৪ এ “JUST_FLARE” দল প্রথম রানার-আপ হয়েছে, এবং “JUST_Triple_Helix” একই প্রতিযোগিতায় প্রথম দশটি দলের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। এই বিভাগ প্রায়ই জাতীয় ও আঞ্চলিক প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় এবং বিভাগের সাফল্য নিয়ে উপচার্য মহোদয় কতৃক অভিনন্দন জানানো হয়। এছাড়াও চতুর্থ বর্ষে শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক প্রজেক্ট, গবেষণাকর্ম এবং ইন্টারশীপ রাখা হয়েছে, যাতে তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা বাড়ে এবং চাকরীর বাজারে এগিয়ে থাকা যায় ও কর্মহীনতা কমিয়ে আনা যায়।

শিক্ষার্থীরা প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ডেও জোর দিয়েছে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সিএসই ক্লাব যা বিভাগের অধীনে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে সিএসই ক্লাব নির্বাচনে সভাপতি পদে নির্বাচিত হোন ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের একেএমএস লিমন ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হোন ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের রাকিব হাসান শিহাব। এই ক্লাবের একটি বড় অংশের নীরলস প্ররিশ্রমে সিএসই বিভাগের নবীন শিক্ষার্থীদের কোডিং এর হাতেঘড়ি হয়। এছাড়াও বিভাগের সহায়তায় স্পোর্টস ডে, স্পোর্টস উইক, বিভিন্ন ওয়ার্কশপ ও নানা আয়োজনের ব্যাবস্থা করে থাকে এই ক্লাব।

যদিও এই বিভাগটির অনেক অর্জন রয়েছে, কিন্তু এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। পর্যাপ্ত গবেষণা ফান্ড, আরোও উন্নত ল্যাব সুবিধা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অধিক সম্পৃক্ততা-সহ আরোও কিছু ক্ষেত্রে উন্নতির সুযোগ রয়েছে। সেইসাথে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স, রোবটিক্স, সাইবার সিকিউরিটি সহ নতুন ক্ষেত্রগুলোর জন্য উন্নত মানের ল্যাব গড়ে তোলা এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা দলবদ্ধভাবে গবেষণা ও উদ্ভাবনী কাজ করা। এটার মাধ্যমে তারা অর্থনৈতিক সহায়তা ও ব্যাবসায় রূপ দেওয়ার সুযোগ পেতে পারবে।

সর্বোপরি, যবিপ্রবি সিএসই বিভাগে শিক্ষক – শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ক্লাসের বাইরেও শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের কাছ থেকে প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া থেকে শুরু করে গবেষণা, প্রজেক্ট-সহ সব জায়গায় তাঁদের পরামর্শ ও সহযোগিতা পায়। এ কারনে এই বিভাগের পরিবেশ হয়ে উঠেছে একটা পরিবারের মতো।

শেয়ার করুন