১৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার
১লা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুয়েটে নিষিদ্ধই থাকছে রাজনীতি, ঘটনার তদন্তে কমিটি গঠন

শেয়ার করুন

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) নিষিদ্ধই থাকছে রাজনীতি। একইসঙ্গে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনসহ পাঁচটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় অনলাইনে অনুষ্ঠিত কুয়েটের সিন্ডিকেটের ৯৮তম (জরুরি) সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাছুদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও প্রকৌশলী মো. আনিছুর রহমান ভূঞা স্বাক্ষরিত সিন্ডিকেট সভার কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।

সিন্ডিকেট সভার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত:

১. রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ বহাল:
২০২৪ সালের ৮ আগস্ট ঘোষিত রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের আদেশটি বহাল থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সকল ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রমে সম্পৃক্ততা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ থাকবে।

2. শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্যও নিষেধাজ্ঞা:
কুয়েট আইন ২০০৩-এর ধারা ৪৪(৫) অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর জন্যও রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রমে সম্পৃক্ততা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে চাকরিচ্যুতিসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

3. ছাত্রদের জন্য কঠোর ব্যবস্থা:
শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে তদন্তসাপেক্ষে আজীবন বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে।

4. সংঘর্ষের ঘটনায় তদন্ত কমিটি:
মঙ্গলবারের সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত বহিরাগতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলা করবে। একইসঙ্গে সরাসরি জড়িত শিক্ষার্থীদের সাময়িক বহিষ্কার করা হবে। প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবে।

তদন্ত কমিটি:

সভাপতি: প্রফেসর ড. এম. এম. এ. হাসেম (কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ)

সদস্য: প্রফেসর ড. মোহাম্মাদ আবু ইউসুফ (শহীদ স্মৃতি হলের প্রভোস্ট)

সদস্য: প্রফেসর ড. আবু জাকির মোর্শেদ (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ)

সদস্যসচিব: সহকারী পরিচালক (ছাত্রকল্যাণ) শাহ মুহাম্মদ আজমত উল্লাহ

 

5. নিরাপত্তা ও চিকিৎসা সহায়তা:
খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের তত্ত্বাবধানে ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বিশ্ববিদ্যালয় বহন করবে।

 

শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া ও আন্দোলন

শিক্ষার্থীরা জানান, দুপুর ১টা পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিলেও প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। দাবি না মানায় তারা প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবন ও বিভাগগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেন।

আজ সকাল ৯টা থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের সামনে অবস্থান নেন, যেখানে ভাইস-চ্যান্সেলর ড. মুহাম্মদ মাছুদ চিকিৎসাধীন।

অন্যদিকে, দুপুর ১২টার দিকে খুলনার শিববাড়ি মোড়ে ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করেন। পরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা কুয়েটে হামলা ও উসকানিতে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান।

সংঘর্ষের পটভূমি

রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে মতবিরোধের জেরে মঙ্গলবার কুয়েটে ছাত্রদল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, যেখানে অর্ধশতাধিক আহত হন। এ ঘটনার পর রাতে শিববাড়ি মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান নেন, তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

 

শেয়ার করুন