
পেরিমেনোপজের লক্ষণ নিয়ন্ত্রণে প্রাকৃতিক ভেষজ চা
৩০ বা ৪০-এর দশকের শেষের দিকে পৌঁছালে অনেক নারী মাসিক চক্রের পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারেন, যেমন— দীর্ঘ বা স্বল্প সময়ের চক্র, অনিয়মিত পিরিয়ড, অতিরিক্ত রক্তপাত বা কখনো পিরিয়ড মিস হওয়া। এই অনিয়মগুলো সাধারণত পেরিমেনোপজের লক্ষণ, যা মেনোপজের আগে একটি স্বাভাবিক পরিবর্তন। ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের ওঠানামার কারণে এই ট্রানজিশন ঘটে, যা বিষণ্ণতা, ক্লান্তি বা শারীরিক অস্বস্তি বাড়িয়ে তুলতে পারে। তবে কিছু প্রাকৃতিক উপায় আছে, যা এই সময়ের অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
ডায়েটিশিয়ান মনপ্রীত কালরার পরামর্শ অনুযায়ী, এক ধরনের ভেষজ চা পেরিমেনোপজের লক্ষণ কমাতে কার্যকরী হতে পারে। এই চায়ের উপাদানগুলো হলো জিরা, জোয়ান, আদা, জাফরান ও গুড়, যা হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখার পাশাপাশি মাসিক চক্রকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
ভেষজ চায়ের উপকারিতা
১. জিরা:
জিরা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহ-বিরোধী উপাদানে সমৃদ্ধ। এটি ইস্ট্রোজেনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যার ফলে মাসিক চক্র স্বাভাবিক থাকে। এছাড়া, এটি হজমশক্তি উন্নত করে ও পেট ফাঁপা কমাতে সহায়ক।
২. জোয়ান:
জোয়ান অনিয়মিত পিরিয়ড চক্র নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী। এটি শরীরের উষ্ণতা বৃদ্ধি করে, যা মাসিকের প্রবাহকে উদ্দীপিত করে এবং একটি সুষম চক্র বজায় রাখতে সহায়তা করে।
৩. আদা:
আদা একটি প্রাকৃতিক প্রদাহ-বিরোধী উপাদান, যা জরায়ুর প্রদাহ কমিয়ে প্রজনন স্বাস্থ্যকে সহায়তা করে। এটি জরায়ুর সংকোচন উদ্দীপিত করে, যা মাসিক চক্রকে নিয়মিত রাখতে সহায়ক। একই সঙ্গে আদা পেটফাঁপা ও বমি বমি ভাব কমাতে সাহায্য করে।
৪. জাফরান:
জাফরান নারীদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর পাশাপাশি সেরোটোনিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে, যা মেজাজের ওঠানামা, উদ্বেগ ও বিরক্তি দূর করতে সহায়ক।
৫. গুড়:
গুড় একটি প্রাকৃতিক আয়রনসমৃদ্ধ মিষ্টি উপাদান, যা পেরিমেনোপজের কারণে ক্লান্তি ও রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং মাসিকের ব্যথা কমাতে কার্যকর।
কিভাবে চা তৈরি করবেন?
উপকরণ:
১ চা চামচ জিরা
১ চা চামচ জোয়ান
১ ইঞ্চি আদা কুঁচি
এক চিমটি জাফরান
১ চা চামচ গুড়
২ কাপ পানি
প্রস্তুত প্রণালী:
১. একটি পাত্রে ২ কাপ পানি গরম করুন।
2. এতে জিরা, জোয়ান ও আদা দিয়ে ৫-৭ মিনিট ফুটতে দিন।
3. পানি ফুটে গেলে জাফরান যোগ করুন এবং আরও ২ মিনিট রেখে দিন।
4. গরম পানি থেকে নামিয়ে গুড় মিশিয়ে নিন।
5. ছেঁকে নিয়ে উষ্ণ অবস্থায় পান করুন।
কতদিন পান করবেন?
প্রতিদিন ১-২ কাপ এই চা পান করলে পেরিমেনোপজের লক্ষণগুলো কমানো সম্ভব।
এই চা শুধু মাসিক চক্রকে স্বাভাবিক রাখে না, বরং মেজাজ ঠিক রাখতে ও শারীরিক অস্বস্তি দূর করতেও সাহায্য করে। তাই পেরিমেনোপজের সময় এটি একটি প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যকর সমাধান হতে পারে।