১৬ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার
৩১শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভূমিকম্প নিয়ে কোরআন-হাদিসে কী বলা হয়েছে?

শেয়ার করুন

পৃথিবীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর ও অপ্রত্যাশিত হলো ভূমিকম্প। কারণ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস পাওয়া গেলেও ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয় না। এর ফলে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে।

ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভূমিকম্পকে মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ সময় মানুষের উচিত আল্লাহর কাছে তাওবা করা, বেশি বেশি ইবাদত করা এবং তার রহমত ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করা।

পবিত্র কোরআনের দৃষ্টিতে ভূমিকম্প

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা মানুষকে সতর্ক করেছেন:
“জনপদের অধিবাসীরা কি এতই নির্ভয় হয়ে গেছে যে, আমার শাস্তি তাদের (নিঝুম) রাতেই এসে পড়বে, যখন তারা ঘুমে (বিভোর) থাকবে!”
(সুরা আরাফ: ৯৭)

আল্লাহ পাপের শাস্তি ও ক্ষমা প্রসঙ্গে বলেন:
“যে বিপদ-আপদই তোমাদের ওপর আসে, তা তোমাদের নিজেদের হাতের কামাই। আর আল্লাহ অনেক অপরাধ ক্ষমা করে দেন।”
(সুরা শুরা: ৩০)

ভূমিকম্প সম্পর্কে কোরআনে “যিলযাল” ও “দাক্কা” শব্দ দুটি উল্লেখ করা হয়েছে। “যিলযাল” মানে কোনো বস্তুর নড়াচড়ায় আরেকটি বস্তুর নড়ে ওঠা। “দাক্কা” মানে প্রচণ্ড শব্দ বা কম্পনের কারণে ঝাঁকুনি খাওয়া।

হাদিসের আলোকে ভূমিকম্প

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“এই উম্মত ভূমিকম্প, বিকৃতি ও পাথর বর্ষণের মুখোমুখি হবে। যখন গায়িকা, বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে এবং মদপানের সয়লাব হবে।”
(তিরমিজি: ২২১২)

অন্যত্র তিনি বলেছেন, ভূমিকম্প কিয়ামতের অন্যতম আলামত। কিয়ামত যত নিকটবর্তী হবে, ভূমিকম্পের পরিমাণ ততই বৃদ্ধি পাবে।

ভূমিকম্পের বিভীষিকা

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:
“হে মানবজাতি, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো। নিশ্চয়ই কিয়ামতের ভূমিকম্প হবে এক মারাত্মক ঘটনা। যেদিন তা ঘটবে, স্তন্যপায়ী মা তার সন্তানকে ভুলে যাবে, গর্ভবতী নারীদের গর্ভপাত হয়ে যাবে, এবং মানুষ মাতালের মতো আচরণ করবে। কিন্তু তারা নেশাগ্রস্ত নয়; বরং আল্লাহর শাস্তি হবে ভয়াবহ।”
(সুরা হজ: ১-২)

পাপ ও ভূমিকম্পের সম্পর্ক

হাদিসে ভূমিকম্পের কারণ হিসেবে মানুষের পাপাচার উল্লেখ করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে, গচ্ছিত সম্পদ আত্মসাৎ করা হবে, জাকাতকে জরিমানা হিসেবে মনে করা হবে, ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা হবে, এবং মসজিদে শোরগোল হবে—তখন রক্তিম ঝড়, ভূমিকম্প, ভূমিধস, পাথর বৃষ্টি এবং একটির পর একটি দুর্যোগের জন্য অপেক্ষা করো।”
(তিরমিজি: ১৪৪৭)

সতর্কবার্তা ও করণীয়

বর্তমান ভূমিকম্পগুলোকে আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি সতর্কবার্তা হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ বান্দাদের সাবধান করেন এবং তাদের পাপাচার থেকে ফিরে আসার সুযোগ দেন। আল্লাহ তাআলা অতীতেও অনেক জাতিকে তাদের পাপাচারের জন্য ভূমিকম্প দিয়ে ধ্বংস করেছেন।

তাই মানুষের উচিত আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা, বেশি বেশি ইবাদত করা, এবং জীবনে নৈতিকতা ও সৎ কর্মে মনোযোগী হওয়া।

 

শেয়ার করুন