১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার
৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আগের তিন নির্বাচনের কেউ দায়িত্বে থাকবেন না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

শেয়ার করুন
আগের তিন নির্বাচনের কেউ এবার দায়িত্বে থাকবেন না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
আগের তিন নির্বাচনের কেউ এবার দায়িত্বে থাকবেন না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

১২ অক্টোবর ২০২৫, ঢাকা

বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, আসন্ন নির্বাচনে তাদের কাউকেও আর দায়িত্বে রাখা হবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, “আগামী নির্বাচনে সরকার যথাসম্ভব চেষ্টা করবে, যাতে পূর্বের নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা কেউ আর এবার দায়িত্ব না পান।”

আজ রোববার সকালে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যেসব সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, তাদের বিচার আইনি প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হবে। সেফ এক্সিট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি দেশে থাকি, আমার সন্তানরাও দেশে থাকে—আমার সেফ এক্সিটের প্রয়োজন নেই।”

নির্বাচন প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং ওসি–দের স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ যাতে আইনবহির্ভূত কার্যক্রমে জড়িত না হন, সে বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। পাশাপাশি মাঠপর্যায়ের সদস্যদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক বডি–ওর্ন ক্যামেরা সরবরাহ করা হচ্ছে।

নির্বাচনকেন্দ্রিক নিরাপত্তা প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রায় দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, ২৮টি ব্যাচে তিন দিন মেয়াদি এ প্রশিক্ষণ সারা দেশের ১৩০টি ভেন্যুতে চলছে। ইতিমধ্যে একটি ব্যাচের (৬,৫০০ জন) প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে, আরেকটি ব্যাচের প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে। সব ব্যাচের প্রশিক্ষণ আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সম্পন্ন হবে।

আনসার–ভিডিপির প্রশিক্ষণ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, এবারের নির্বাচনে মোট ৫ লাখ ৮৫ হাজার সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে—এর মধ্যে ১ লাখ ৩৫ হাজারকে অস্ত্রসহ এবং সাড়ে চার লাখকে নিরস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে এই প্রশিক্ষণ শেষ হবে। পাশাপাশি আনসার ব্যাটালিয়নের ৩ হাজার ১৫৭ নতুন সদস্যকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

নির্বাচনে বিজিবির ১ হাজার ১০০ প্লাটুনে প্রায় ৩৩ হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের ৬০ শতাংশের প্রশিক্ষণ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, যা ডিসেম্বরের শেষে শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন উপদেষ্টা। এছাড়া এবারের নির্বাচনে প্রায় ৮০ হাজার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে।

সাম্প্রতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলের প্রবণতা এখন অনেক কমে এসেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিও শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিছু ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠী ও তাদের প্রভাবিত বুদ্ধিজীবীরা দুর্গাপূজার সময় অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল, তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে।”

শেয়ার করুন