১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার
৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শবে বরাতে করণীয় ও বর্জনীয়

শেয়ার করুন

শবে বরাতে করণীয় ও বর্জনীয়

শবে বরাত, যা লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান বা লাইলাতুল বারাআত নামে পরিচিত, শাবান মাসের ১৪ তারিখের রাত। এটি মুক্তি ও সৌভাগ্যের রাত হিসেবে বিবেচিত হয়, যেখানে মহান আল্লাহ তার বান্দাদের ক্ষমা করেন, দোয়া কবুল করেন এবং অনুগ্রহ দান করেন।

শবে বরাত সম্পর্কে হাদিস

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক রাতে রাসুলুল্লাহ (সা.) দীর্ঘ সময় সেজদায় কাটান। হজরত আয়েশা (রা.) মনে করেছিলেন, তিনি ইন্তেকাল করেছেন। সন্দেহ দূর করতে গিয়ে যখন তিনি নবীজির (সা.) বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়ালেন, তখন নবীজি সাড়া দেন এবং নামাজ শেষ করে বলেন,

“হে আয়েশা! তুমি কি জানো, আজকের রাতটি কী রাত?”

হজরত আয়েশা (রা.) বললেন, “আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন।”

তখন নবীজি (সা.) বললেন,

“এটি অর্ধ শাবানের রাত। আল্লাহ এই রাতে বান্দাদের প্রতি দৃষ্টি দেন, ক্ষমা চান, অনুগ্রহ করেন, তবে যারা বিদ্বেষ পোষণকারী, তাদের ক্ষমা করেন না।” (শুআবুল ঈমান, বাইহাকী ৩/৩৮২-৩৮৬)

এই ফজিলতের কারণে মুসলিম বিশ্বে এই রাত বিশেষ ইবাদতের মাধ্যমে পালন করা হয়। তবে শবে বরাত নিয়ে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। তাই করণীয় ও বর্জনীয় কিছু দিক তুলে ধরা হলো

শবে বরাতে করণীয়

ইশা ও ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করা
শবে বরাতে অনেকে সারারাত নফল ইবাদতে ব্যস্ত থাকেন, কিন্তু ফজর কাজা করে ফেলেন। অথচ হাদিসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি ইশা ও ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করে, সে পুরো রাত নফল ইবাদতের সওয়াব পায়।

নফল নামাজ আদায় করা
যেহেতু শবে বরাত একটি ফজিলতপূর্ণ রাত, তাই এই রাতে নফল নামাজ পড়া সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও এই রাতে নফল নামাজ আদায় করেছেন।

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া
তাহাজ্জুদ নামাজ সাধারণত প্রতি রাতেই পড়া উত্তম, তবে যাদের নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়া হয় না, তারা অন্তত এই রাতে তাহাজ্জুদ আদায় করতে পারেন।

আল্লাহর কাছে দোয়া করা
শবে বরাত এমন একটি রাত, যখন আল্লাহ বান্দার প্রার্থনা কবুল করেন। তাই নিজের এবং অন্যদের জন্য দোয়া করা উচিত।

তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করা
এই রাতে তওবা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাদিসে আছে, “যে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে তওবা করে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন।” (তিরমিজি)

কোরআন তিলাওয়াত করা
শবে বরাতের অন্যতম সেরা ইবাদত হলো কোরআন তিলাওয়াত করা, যা মানুষকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে।

শবে বরাতে বর্জনীয়

হাদিসে বর্ণিত নয় এমন কাজ করা
শবে বরাত ইবাদতের রাত, কিন্তু হাদিসে উল্লেখ নেই এমন কোনো আমল করা যাবে না।

আতশবাজি ও পটকা ফোটানো
শবে বরাতের পবিত্রতা রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। এই রাতে আতশবাজি ফোটানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

খাবার নিয়ে বাড়াবাড়ি করা
অনেকে মনে করেন, শবে বরাতে বিশেষ খাবার (যেমন হালুয়া-রুটি) খাওয়া জরুরি, যা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।

ইবাদত বাদ দিয়ে খাবার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত থাকা
অনেকে ইবাদতের চেয়ে খাবার প্রস্তুতিতে বেশি সময় দেন, যা সঠিক নয়।

অপচয় করা ও আলোকসজ্জা করা
মসজিদ বা ঘরবাড়ি আলোকসজ্জা করা অপচয়। কোরআনে বলা হয়েছে, “তোমরা অপচয় কোরো না, নিশ্চয়ই অপচয়কারী শয়তানের ভাই।” (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৭)

সারারাত ইবাদত করে ফজর নামাজ কাজা করা
শবে বরাতের কারণে সারারাত জেগে ইবাদত করে যদি কেউ ফজরের ফরজ নামাজ কাজা করে, তবে তার ইবাদতের কোনো ফায়দা নেই।

 

শবে বরাত একটি ফজিলতপূর্ণ রাত, তবে তা উদযাপন করার চেয়ে ইবাদতের মাধ্যমে কাটানোই উত্তম। এই রাতে হাদিসসম্মত আমল করা উচিত এবং কুসংস্কার ও বিদআত থেকে দূরে থাকা উচিত।

 

শেয়ার করুন