
টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে গুলশানের বিলাসবহুল ভবনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ
যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে ‘বিনামূল্যের ফ্ল্যাট’ সংক্রান্ত তদন্তের মধ্যে এবার ব্রিটেনের সাবেক ইকনোমিক সেক্রেটারি টু দি ট্রেজারি এবং সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে ঢাকার গুলশানের একটি বিলাসবহুল ভবনের সম্পৃক্ততার তথ্য সামনে এসেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ-এর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, গুলশানের একটি ১০ তলা বিলাসবহুল টাওয়ারের বাসিন্দা হিসেবে টিউলিপ সিদ্দিকের নাম তালিকাভুক্ত ছিল এবং সম্পত্তিটির নামকরণ করা হয়েছে তার পরিবারের নামে।
টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার সরকারের সাবেক মন্ত্রী। ২০২৩ সালে লেবার পার্টি ক্ষমতায় আসার পর তিনি ইকনোমিক সেক্রেটারি টু দি ট্রেজারি এবং সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মূলত, তার কাজ ছিল ব্রিটেনের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতি রোধ করা। তবে দুর্নীতির অভিযোগের মুখে গত জানুয়ারিতে তিনি মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
ঢাকায় টিউলিপের সম্পত্তি?
ঢাকার একাধিক কর্মকর্তা বিশ্বাস করেন, ‘সিদ্দিকস’ নামে পরিচিত বিলাসবহুল এই অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স ২০১৪ সালে টিউলিপ সিদ্দিকের “স্থায়ী ঠিকানা” ছিল। সেসময় তিনি যুক্তরাজ্যের উত্তর লন্ডনের ক্যামডেনের কাউন্সিলর ছিলেন।
দ্য টেলিগ্রাফ আরও জানিয়েছে, গুলশানের এই ভবনটি কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এলাকায় অবস্থিত। বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশে এটি টিউলিপের সঙ্গে সম্পৃক্ত পঞ্চম সম্পত্তির সন্ধান।
তবে, যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে টিউলিপ সিদ্দিকের কোনো সম্পত্তি নেই, ফলে এ বিষয়ে তিনি কোনো ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না।
দুর্নীতি তদন্তের জেরে পদত্যাগ
যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভার সদস্যদের জন্য মানদণ্ড পর্যবেক্ষণকারী প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা লাউরি ম্যাগনাসের তদন্তের জেরে টিউলিপ সিদ্দিক গত জানুয়ারিতে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
এদিকে, বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে সম্পত্তি বিষয়ক তদন্ত চালাচ্ছে। গাজীপুরের কানাইয়া এলাকায় ‘টিউলিপস টেরিটরি’ নামে একটি প্লট এবং পারিবারিক অবকাশযাপন কেন্দ্র নিয়েও অনুসন্ধান চলছে।
একটি অফিশিয়াল নথিতে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে টিউলিপের ঠিকানা হিসেবে গুলশানের ওই ভবনের নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল।
পারমাণবিক প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
বাংলাদেশে টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবারের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে রাশিয়ার অর্থায়নে নির্মিত একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। ২০২3 সালের ডিসেম্বর থেকে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হয়।
এরপর তদন্তকারীরা দেশটির বিভিন্ন ব্যাংককে টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টগুলোর লেনদেন বিবরণ জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
লন্ডনের ‘বিনামূল্যের ফ্ল্যাট’ বিতর্ক
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক সানডে টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লন্ডনের কিং’স ক্রস এলাকায় অবস্থিত ২ শয্যার একটি ফ্ল্যাট ২০০৪ সালে টিউলিপ সিদ্দিককে উপহার দেন আবদুল মোতালিফ নামে এক ডেভেলপার।
মোতালিফ বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। তবে টিউলিপ সিদ্দিকের দাবি, তিনি কোনো অনৈতিক সম্পদের মালিক নন।