
কয়েক বছর ধরে ভ্রমণের অন্যতম প্রিয়স্থান হিসেবে সুপরিচিত চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল।
পর্যটনের সকল উপাদান এখানে উপস্থিত থাকায় সপ্তাহান্তে—বিশেষত বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার—অগণন পর্যটকের ভিড়ে মুখরিত হয়ে ওঠে শহরটি। শীত মানেই ভ্রমণের আনন্দ; একাকি, বন্ধুদের সঙ্গে কিংবা পরিবারের সবার সঙ্গে দূরে কোথাও বেরিয়ে পড়া।
চায়ের শহর শ্রীমঙ্গলে শীত আসে অদেখা সৌন্দর্যের বার্তা নিয়ে। পাহাড়ের কোণে জমে থাকা কুয়াশা ও শীতের মেলবন্ধন এই অঞ্চলকে নয়নাভিরাম করে তোলে। শীতের চাদরে মোড়ানো এই জনপদ যেন প্রকৃতির অমূল্য সৃষ্টি।
দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ শ্রীমঙ্গল তার চা শিল্পের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। ঢাকার প্রায় ২০০ কিলোমিটার উত্তরে, সিলেট বিভাগের দক্ষিণে সুবিশাল পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এই স্থানটি প্রকৃতির সুরম্য নিকেতন।
শ্রীমঙ্গলে রয়েছে শুধু চা বাগান নয়, অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। চা বাগান, লেক, হাওর, উঁচু-নিচু পাহাড়, রাবার বাগান, আর সবুজ বনানীর মাঝে বর্ণিল পাখির কলকাকলিতে এটি এক অপরূপ স্থান।
শ্রীমঙ্গলের অন্যতম আকর্ষণ লালমাটি টিলা, যা ফুলছড়া চা বাগানে অবস্থিত। পাহাড়ি লালমাটির পথ, কুয়াশাঘেরা শীতকালীন দৃশ্যাবলি এবং টিলার মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভ্রমণপিপাসুদের মুগ্ধ করে। টিলার মাটি লাল রঙের হওয়ায় এটি স্থানীয়ভাবে লালমাটি টিলা নামে পরিচিত। টিলার ওপরে সনাতন ধর্মালম্বীদের একটি কালি মন্দির থাকায় অনেকে একে কালি মা টিলা বলেও ডাকেন।
লালমাটি টিলার সৌন্দর্যের বিশেষত্ব এর দ্বৈত রূপ—সবুজে মোড়া আরণ্যক শোভা এবং শীতের কুয়াশা ঢাকা মাধুর্য। টিলার উপরে উঠলে মনে হয় আকাশ যেন পাহাড়ের সঙ্গে মিশে গেছে। টিলার চারপাশে আকাশমনি, ইউক্যালিপটাস, রাবারগাছ, কড়ইসহ নানা গাছ এবং ওষধি লতাগুল্ম পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
প্রতিদিন শতাধিক দর্শনার্থী লালমাটি টিলায় আসেন, আর ছুটির দিনে ভিড় থাকে সবচেয়ে বেশি। স্থানীয় চা-শ্রমিক নেতা জগবন্ধু বলেন, মন্দির থাকার কারণে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপস্থিতি বেশি। এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠলে স্থানীয় মানুষ যেমন উপকৃত হবে, তেমনি কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হবে।
সরকার যদি পর্যটন শিল্প গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়, তবে এই অঞ্চলটি পর্যটন মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে উঠতে পারে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লীলাভূমি শ্রীমঙ্গল প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণপিপাসুদের জন্য স্বর্গতুল্য।