১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার
৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অদেখা পাহাড়ি বুনোওলের ফল

শেয়ার করুন

সকালে বনের পথে হাঁটতে হাঁটতে এক অদ্ভুত ফলের সাথে দেখা। প্রাকৃতিক বনের সবুজ গভীরতায় নানান গাছগাছালির মাঝে লালচে রঙের উজ্জ্বল একটি ফলের গুচ্ছ দৃষ্টি আকর্ষণ করল। দূর থেকে ফুল মনে হলেও এটি আসলে একটি বুনো ফলের গুচ্ছ, যা দেখতে অপূর্ব। তবে প্রথম দেখায় একে ফল না ফুল, সেটি ঠিক বোঝা মুশকিল।

ফলটির অবস্থান সম্পর্কে স্থানীয় শংকর সাঁওতাল জানান, এটি তারা “বনডুগি” নামে চেনেন। এই গাছের ডাটা কেটে তারা সবজি হিসেবে রান্না করেন। পাহাড়ি এলাকার বনেই মূলত এই উদ্ভিদ জন্মায়।

উদ্ভিদ গবেষক জিনিয়া নাসরিন সুমনের মতে, এই উদ্ভিদটি এক ধরনের “বুনো ওল”। এটি আমাদের রিজার্ভ ফরেস্ট বা প্রাইমারি ফরেস্টে দেখা যায়। আগে সারা দেশেই এ উদ্ভিদ পাওয়া যেত, তবে এখন কেবল সিলেট ও পাহাড়ি এলাকাতেই এর অস্তিত্ব রয়েছে। Araceae পরিবারের সদস্য হওয়ায় এতে ক্যালসিয়াম অক্সালেট নামক উপাদান থাকে, যা গলা চুলকানোর কারণ হতে পারে।

এই উদ্ভিদের ফল দেখতে সুন্দর লাল বেরির মতো। যদিও তা বিষাক্ত, এর ডাটা অন্যান্য কচু বা ওলের মতো খাওয়া যায়। উদ্ভিদটির ইংরেজি নাম রয়েছে— Devil’s Tongue, Voodoo Lily, Corpse Flower, বা Snake Palm।

ওলের ফুল পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ফুল। এর পচা মাংসের মতো গন্ধ বিশেষ ধরনের গুবরে পোকার আকর্ষণের জন্য। পোকাগুলো ফুলে ঢুকে রাত কাটায়, ফলে পরাগায়ন ঘটে। এরপর এসব ফুল থেকে এমন লাল রঙের গুচ্ছফল তৈরি হয়।

উদ্ভিদ গবেষক সুমন জানান, কচুর প্রজাতির উদ্ভিদগুলো সাধারণত ভেজিটেটিভ উপায়ে বংশবিস্তার করে। এদের ফুলে গোলাপি স্প্যাথ থাকে, যা সাপের ফণার মতো দেখতে। এ ধরনের ফুলকে “লাশ ফুল” বলা হয়। কারণ, এদের গন্ধ পচা মাংসের মতো, যা পরাগায়নের জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখে।

পাহাড়ি বনের এই বুনো ওলের উপস্থিতি প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

শেয়ার করুন