
আল্লাহর প্রিয় হওয়ার গুণাবলী: কিছু গুরুত্বপূর্ণ গুণ যা আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন করতে সাহায্য করে
আল্লাহর প্রিয় হওয়ার জন্য কিছু বিশেষ গুণ অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে মহান আল্লাহ সেসব গুণের অধিকারীদের ভালোবাসার ঘোষণা দিয়েছেন। যদি কোনো মুমিন আল্লাহর প্রিয় হতে চান, তবে তাকে এই গুণগুলো অনুসরণ করতে হবে। নিচে এমন কিছু গুণের আলোচনা করা হলো, যা আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনে সহায়ক:
১. সৎকর্মশীলতা
সৎকর্ম বা নেক আমল মানুষের পরকালীন জীবনের মূলধন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একমাত্র উপায়। মহান আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে:
“তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করো এবং (ব্যয় না করে) নিজেদের সর্বনাশ করো না। আর তোমরা সৎকর্ম করো, নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।” (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৯৫)
২. পবিত্রতা
পবিত্রতা ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যায়। শারীরিক পবিত্রতা যেমন সুস্থতা নিয়ে আসে, তেমনি আত্মিক পবিত্রতা মানুষের আমলকে পরিশুদ্ধ করে। কোরআনে আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসার ঘোষণা দিয়েছেন:
“সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন ভালোবাসে, আর পবিত্রতা অর্জনকারীদের আল্লাহ পছন্দ করেন।” (সুরা তাওবা, আয়াত: ১০৮)
৩. তাওবা
তাওবা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা, যা আল্লাহর কাছে পাপ মোচনের প্রক্রিয়া। তাওবার মাধ্যমে মানুষ তার গুনাহ থেকে পবিত্র হয়ে আল্লাহর কাছে ফিরে আসে। কোরআনে আল্লাহ বলেন:
“হে ঈমানদাররা, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো—খাঁটি তাওবা। আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদের এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার পাদদেশে নহর প্রবাহিত।” (সুরা তাহরিম, আয়াত: ৮)
৪. তাকওয়া
তাকওয়া (আল্লাহভীতি) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গুণ, যা মুমিনদের মধ্যে থাকা উচিত। কোরআনে তাকওয়ার অধিকারীদের জন্য আল্লাহ বিভিন্ন ধরনের সুসংবাদ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন:
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের সঙ্গে থাকেন, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে।” (সুরা নাহল, আয়াত: ১২৮)
“নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালোবাসেন।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৭৬)
৫. ধৈর্যশীলতা
এই দুনিয়া একটি পরীক্ষা ক্ষেত্র, যেখানে সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না সকলের সঙ্গী। যারা কঠিন পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রাখে, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে:
“আর বহু নবী ছিল, তাদের সঙ্গে বিরাটসংখ্যক (নেককার) লোক যুদ্ধ করেছে। আল্লাহর পথে তাদের যে বিপর্যয় ঘটেছিল তাতে তারা হীনবল হয়নি, দুর্বল হয়নি এবং নত হয়নি। আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৪৬)
৬. আল্লাহর ওপর ভরসা করা
যারা আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা করে জীবনের সমস্ত কাজ পরিচালনা করেন, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে:
“অতঃপর তুমি কোনো সংকল্প গ্রহণ করলে আল্লাহর প্রতি নির্ভর করো। নিশ্চয় আল্লাহ (তাঁর ওপর) নির্ভরশীলদের ভালোবাসেন।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৫৯)
৭. ন্যায়নিষ্ঠতা
ন্যায়পরায়ণতা সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আল্লাহ ন্যায়নিষ্ঠদের ভালোবাসেন এবং তাদের প্রতি সন্তুষ্ট। কোরআনে আল্লাহ বলেন:
“নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।” (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৪২)
এই গুণগুলো অর্জন করে একজন মুমিন আল্লাহর প্রিয় হতে পারেন এবং তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করতে সক্ষম হন।