১৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার
২রা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জন্মনিবন্ধন করাতে হিমশিম খাচ্ছে জনতা

শেয়ার করুন

ছেলের জন্মনিবন্ধন করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অধীন অঞ্চল-২ এর কার্যালয়ে এসেছেন রেহেনা খাতুন। এক মাস পরেই ছেলের স্কুলে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে। এ জন্য জন্মনিবন্ধন সনদ অপরিহার্য। এই সনদ পেতে কিছুদিন ধরে ঘোরাঘুরি করছেন তিনি। শুধু রেহেনা খাতুন নন, তার মতো অনেক অভিভাবক সিটি কর্পোরেশনের এই কার্যালয়ে ছোটাছুটি করছেন। সবারই একই কথা, সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করাতে হবে।
স্কুলে ভর্তি হওয়ার অপরিহার্য এই সনদ পেতে ভোগান্তিও কম পোহাতে হচ্ছে না। রেহেনা খাতুন বলেন, জন্মনিবন্ধন করানোর প্রক্রিয়াটি খুবই জটিল। এটি আগে বুঝতে পারিনি। জানুয়ারিতে ছেলের স্কুলে ভর্তি। যে কারণে তার জন্মনিবন্ধন সনদ লাগবে। আশা করেছিলাম দ্রুত কাজটি শেষ করতে পারব। কিন্তু বছরের শেষে এসে রীতিমতো ঝামেলায় পড়ে গেছি।
‘জন্মনিবন্ধন কোনোভাবেই করাতে পারছি না। শুধু আমি নই, সবারই পরিকল্পনা ছিল যে বছরের শুরুতে নিজ নিজ সন্তানকে স্কুলে দেবে, সে কারণে জন্মনিবন্ধন করতে আসা অভিভাবকদের প্রচণ্ড ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোও হিমশিম খাচ্ছে। তারা বলছে, ছেলের জন্মসনদ পেতে হলে বাবা-মারও জন্মসনদ থাকতে হবে। এখন এটি করানোর জন্য আমাদের যেতে হবে নিজ জেলায়। হঠাৎ যেন বড় ধরনের ঝামেলায় জড়িয়ে পড়লাম।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, চাকরিতে যোগদান, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ নাগরিক সেবার ১৯টি ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন সনদের প্রয়োজন হয়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল, যা সবার আবশ্যিক প্রয়োজন। এত গুরুত্বপূর্ণ একটি দলিল হাতে পেতে দিনের পর দিন সিটি কর্পোরেশনের কার্যালয়ে ঘুরতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের। এ ছাড়া আসছে নতুন বছর, রাজধানীসহ দেশের স্কুলগুলোতে সন্তানদের ভর্তির জন্য তৎপর হয়ে ওঠেন অভিভাবকরা। এ সময়ে জন্মসনদের আবেদনপত্র স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি পড়ে।
বিষয়টি স্বীকার করেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। তারা জানান, প্রতিদিন হাজার হাজার অভিভাবক এসে ভিড় করছেন। কাঙ্ক্ষিত লোকবলের অভাবে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
কারণ ব্যাখ্যা করে তারা আরও জানান, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা পালিয়ে যান। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলররাও আত্মগোপনে চলে যান। পরে মেয়রদের অপসারণ করে প্রশাসক বসানো হয়। অপসারণ করা হয় কাউন্সিলরদেরও। সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে গঠন করা হয় দুটি কমিটি।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় দুই কমিটির ৫০ জন এবং ২০ জন আঞ্চলিক কর্মকর্তাসহ ৭০ জনকে। বর্তমানে ওয়ার্ডগুলোতে প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে সংশ্লিষ্ট সচিবরা দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে, চলতি বছর জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম সহজ করতে ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে এ সনদ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। ৫৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে আগের ৩৬টিতে এ সেবা চালু করে তারা। যেখানে ওয়ার্ড কাউন্সিলররা এটি প্রদান করতে পারতেন। এ ছাড়া নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোর ক্ষেত্রে (৩৭ থেকে ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড) সেখানকার বাসিন্দাদের জন্মনিবন্ধন সনদ নিতে ডিএনসিসির সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক কার্যালয়ে যেতে বলা হয়। পাশাপাশি জন্মনিবন্ধন সংক্রান্ত কোনো সংশোধনী থাকলে তা করতে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়। পরবর্তীতে সব ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে অপসারণ করা হলে এ সেবা প্রদানের দায়িত্ব দেওয়া হয় ওয়ার্ড সচিবদের। যে কারণে জন্মনিবন্ধন সনদ পেতে ভোগান্তি বেড়ে যায়— বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আগে থেকেই জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়া হতো তাদের আঞ্চলিক ১০টি কার্যালয় থেকে। এ ছাড়া জন্মনিবন্ধন সংক্রান্ত কোনো সংশোধনী থাকলে তা সদরঘাটে অবস্থিত জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে করিয়ে আনতে বলা হতো। বর্তমানে আঞ্চলিক কার্যালয়গুলো থেকে এ সনদ দেওয়া হচ্ছে। তবে, লোকবল সংকট এবং হঠাৎ করে চাপ বেড়ে যাওয়ায় তাদেরও হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অধীন ২১ নম্বর ওয়ার্ড

শেয়ার করুন