১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার
১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দুদক তদন্ত থামাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ অনুরোধ

শেয়ার করুন

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির চাকতাই শাখা থেকে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ আত্মসাতের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানে ওঠে আসে—বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্তত আট কর্মকর্তা ঋণ অনুমোদন ও তদারকিতে অনিয়ম, অবহেলা বা যোগসাজশে যুক্ত ছিলেন। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধান শুরু হয় এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি পাঠায় দুদক। কিন্তু দায় অস্বীকার করে এসব কর্মকর্তাকে অনুসন্ধান থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য উল্টো দুদকের কাছে ‘বিশেষ অনুরোধ’ জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক—যা আইনজ্ঞদের মতে দুদকের কাজে সরাসরি হস্তক্ষেপ।

দুদকের নথি অনুযায়ী, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে মাত্র ২১ দিনের মধ্যে ভুয়া নথিপত্র তৈরি করে চাকতাই শাখায় ৮৯০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন ও এক মাসের কম সময়ে তা ছাড় করা হয়। সাধারণ গ্রাহকের আমানত ঝুঁকিতে ফেলা এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষতির প্রমাণ পেয়ে দুদক গত বছর ৫৮ জনকে আসামি করে মামলা করে। পরে তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের আট কর্মকর্তা—যুগ্ম পরিচালক, অতিরিক্ত পরিচালকসহ কয়েকজনের অনিয়ম ও অবহেলার প্রমাণ পায় দুদক।

এই আট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে দুদক জানুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি পাঠায়। পাশাপাশি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধানে ৩ সদস্যের দল গঠন করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে দুদকের চাওয়া তথ্য দিতে বিলম্ব করে, আংশিক তথ্য দেয় এবং পরবর্তীতে ‘কোনো দায় পাওয়া যায়নি’ দাবি করে তদন্ত বন্ধের জন্য বিশেষ অনুরোধ পাঠায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, তাদের পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শনে কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া যায়নি; বরং ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পর্যায়ের বিচ্যুতির দিকেই আঙুল তোলা হয়। তাই তদন্ত থেকে অব্যাহতির অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এই চিঠিকে বেআইনি ও দুদকের কাজে চাপে ফেলার চেষ্টা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর দেলোয়ার জাহান রুমি বলেন, কার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান হবে তা দুদকের এখতিয়ার—এতে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের হস্তক্ষেপ বৈধ নয়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাদিম মাহমুদ বলেন, জনগণের হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের পর এমন ‘রক্ষাকবচ’ দেওয়া অগ্রহণযোগ্য। এটি দুদকের কাজে হস্তক্ষেপ এবং বেআইনি প্রভাব প্রয়োগের শামিল।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানও একই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, দুদকের অনুসন্ধানে হস্তক্ষেপ করার অধিকার কোনো প্রতিষ্ঠানই রাখে না। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এমন চিঠি দিয়ে থাকে, তবে দুদকের উচিত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং জবাবদিহির আওতায় আনা।

সিএনআই/২৫

শেয়ার করুন