১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার
১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘হাসিনা ইস্যুতে’ ঢাকা–দিল্লি সম্পর্কে কী প্রভাব পড়বে?

শেয়ার করুন

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক কোন পথে যাবে—এ নিয়ে দুই দেশেই আলোচনা তীব্র হয়েছে।

আগামী তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। নতুন সরকার গঠনের পর ‘শেখ হাসিনা ইস্যু’ দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা এখন রাজনীতি ও পররাষ্ট্রবিশ্লেষকদের বড় নজরে।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক দ্রুত অবনতি ঘটে। এমন প্রেক্ষাপটে নতুন রায় ঘোষণার পর দুই দেশের সম্পর্ক কোন দিকে যাবে, তা নিয়ে কৌতূহল বেড়েছে।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হন। আরেক অভিযুক্ত সাবেক আইজিপি ও রাষ্ট্রের সাক্ষী চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায় ঘোষণার সময় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান ভারতে অবস্থান করছিলেন, অন্যদিকে মামুন কারাগারে আছেন।

রায় ঘোষণার পরপরই বাংলাদেশের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের জন্য ভারতকে পুনরায় অনুরোধ করা হবে। পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ভারতকে দ্রুত দণ্ডপ্রাপ্ত দুই ব্যক্তিকে হস্তান্তরের আহ্বান জানায়। তবে ভারত এর আগে যেমন আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি, এবারও কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি।

ভারতের সরকারি অবস্থান হলো—বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাজনিত কারণে তাকে ‘সাময়িকভাবে’ আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

ভারতের ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগীয় অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, প্রত্যর্পণ জটিল বিষয় এবং মৃত্যুদণ্ডের ঝুঁকি থাকলে হস্তান্তর না করার যুক্তি আরও শক্ত হয়। তার মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা কম।

বাংলাদেশ–ভারত প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকলেও এমন বহু ধারা রয়েছে, যা বিবেচনায় নিয়ে ভারত অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারে। মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি ভারতের কাছে সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে, বাংলাদেশিদের জন্য ভারত গত এক বছর ভিসা সীমিত করেছে; পর্যটন ভিসা সম্পূর্ণ বন্ধ, মেডিকেল ভিসাও পাওয়া কঠিন। অপরদিকে বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক নেতার ভারতবিরোধী বক্তব্য, আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা—সব মিলিয়ে দিল্লি সম্পর্ককে আরও কঠিন করে দেখছে। পাকিস্তানের সঙ্গে বর্তমান সরকারের ঘনিষ্ঠতাও ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, তার নীতি–দৃষ্টিভঙ্গিই দুই দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ধারণ করবে। সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ—নতুন সরকারের চরিত্র, ভারতের সাথে তাদের সম্পর্ক–মানসিকতা এবং শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভূমিকা।

তিনি মনে করেন, চাইলে ‘হাসিনা ইস্যু’ পাশে রেখে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা যেতে পারে, আবার এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে চাপও সৃষ্টি হতে পারে। শ্রীরাধা দত্তের মতে, নতুন সরকার থেকেও আবার প্রত্যর্পণের অনুরোধ আসতে পারে, তবে এ ইস্যু ধরে রাখলে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নতির পথে বাধা হবে।

সিএনআই/২৫

শেয়ার করুন