
সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীকে বৈধ ঘোষণা করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে এ রায় ঘোষণা করেন।
বিচারপতিদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে ২০১১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়। ফলে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্ত থাকা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান পুনরুজ্জীবিত হলো। তবে এ ব্যবস্থা এখনই কার্যকর হবে না—এটি চতুর্দশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে কার্যকর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
আদালতের মূল সিদ্ধান্তসমূহ
-
২০১১ সালে দেওয়া বাতিল রায়কে “ভুল” হিসেবে উল্লেখ করে পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে।
-
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে আবারও বৈধ ও সক্রিয় হলো।
-
এটি ভবিষ্যতের জন্য প্রযোজ্য—অতীতে এর কোনো প্রভাব পড়বে না।
-
৫৮খ(১) ও ৫৮গ(২) অনুচ্ছেদের বিধান বাস্তবায়ন হলেই এ ব্যবস্থা কার্যকর হবে।
২০১১ সালে খায়রুল হক নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করেছিলেন। পরে ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপিতে পরিবর্তন আনার অভিযোগ ওঠে, যা রাজনৈতিক বিতর্ক আরও বাড়ায়। গত বছর সরকার পরিবর্তনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে নতুন আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম পরওয়ার ও পাঁচজন বিশিষ্ট নাগরিক আপিল করেন। বিভিন্ন দিনে দীর্ঘ শুনানি শেষে আজ রায় ঘোষণা করা হয়।
আইনজীবী শিশির মনির বলেন, বর্তমান সংসদ না থাকায় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ভোট সম্ভব নয়। তবে চতুর্দশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে এ ব্যবস্থা কার্যকর হবে—এমনটাই আবেদনকারীরা চেয়েছিলেন।
১৯৯৬ সালে জনদাবির মুখে বিএনপি সরকার তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা প্রবর্তন করে এবং এ পদ্ধতির অধীনে তিনটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়—১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে। এরপর আইনি জটিলতা, রায়-বিতর্ক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব পেরিয়ে আজ আবারও সংবিধানে ফিরে এলো এ ব্যবস্থা।
সিএনআই/২৫