
কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য নিম্নমানের মাস্ক, পিপিই ও অন্যান্য সরঞ্জাম ক্রয়সহ বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আবারও তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস প্রকল্পের (ইআরপিপি) আওতায় ৭০০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা) ব্যয়ে কেনাকাটা ও সরবরাহে দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করেছে সংস্থাটি।
নতুন তদন্ত কমিটি
দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ নুরুল হুদার নেতৃত্বে তদন্ত দলে রয়েছেন:
সহকারী পরিচালক সহিদুর রহমান
সহকারী পরিচালক মো. শাহজাহান মিরাজ
সহকারী পরিচালক মো. ফারুক হোসেন
উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন
তদন্ত দল গত ২০ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর নথিপত্র তলব করে চিঠি দিয়েছে।
কী কী নথি তলব করা হয়েছে?
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জরুরি ভিত্তিতে নিম্নলিখিত নথিপত্র সরবরাহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে:
1. ইআরপিপি প্রকল্পের অধীনে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের কেনাকাটা সংক্রান্ত অনুমোদনপত্র, বরাদ্দপত্র ও দরপত্র সংক্রান্ত তথ্য:
জাদিদ অটোমোবাইলস
এসআরএস ডিজাইন অ্যান্ড ফ্যাশন লিমিটেড
এসআইএম কর্পোরেশন
ইনশা ট্রেড কর্পোরেশন
ব্রেইন স্টেশন ২৩ লিমিটেড
ই-মিউজিক
2. সরবরাহকৃত পণ্যের মান যাচাই প্রতিবেদন, আমদানি রেকর্ড, বিল রেজিস্টার ও অন্যান্য অর্থনৈতিক লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য।
আগের মামলা ও বর্তমান অনুসন্ধান
২০২০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর, কেন্দ্রীয় ওষুধাগারের (সিএমএসডি) ছয় কর্মকর্তা ও জেএমআই হাসপাতাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেডের কর্ণধার মো. আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহের অভিযোগে মামলা করেছিল দুদক। কিন্তু মামলার তদন্ত কার্যক্রম অগ্রসর হয়নি।
এবার নতুন অনুসন্ধানে বিশ্বব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন যুক্ত হয়েছে, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে:
গাড়ি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান জাদিদ অটোমোবাইলসকে মাস্ক ও পিপিই সরবরাহের কাজ দেওয়া হয়, যা অনৈতিক ছিল।
তারা নিম্নমানের সরঞ্জাম সরবরাহ করলেও অর্থ আগাম পরিশোধ করা হয়।
প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) স্ত্রীর কোম্পানিকে ২৯,৫০০ ডলার ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ আছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনও দুর্নীতির প্রমাণ দেয়
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ২০২০ সালের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে:
জাদিদ অটোমোবাইলসকে ৩২ কোটি টাকার কাজ দেওয়া হয়, যদিও তাদের স্বাস্থ্য সরঞ্জাম সরবরাহের অভিজ্ঞতা ছিল না।
৯.৫ কোটি টাকা আগাম পরিশোধের পরও যথাসময়ে পণ্য সরবরাহ হয়নি।
পরে তারা কিছু মাস্ক ও গ্লাভস সরবরাহ করলেও ২৪ হাজার মাস্ক ব্যবহার অনুপযোগী ছিল।
সরকারি ক্রয় বিধি (পিপিআর) ও ক্রয় আইন (পিপিএ) লঙ্ঘন হয়েছে।
এন-৯৫ মাস্ক কেলেঙ্কারি
২০২০ সালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাধারণ মাস্ককে এন-৯৫ মাস্ক হিসেবে সরবরাহ করা হয়। তদন্তে জানা যায়, এসব মাস্ক জেএমআই হাসপাতাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড সরবরাহ করেছিল।
এরপর বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উত্থাপিত হলে দুদকের হটলাইন ১০৬-এ আসা তথ্যের ভিত্তিতে ২০২০ সালের জুনে অনুসন্ধান শুরু হয়।
পরবর্তী পদক্ষেপ
দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন,
“আমরা অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি। অনুসন্ধান শেষে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে।”
বিশ্বব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এবার কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।