১৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার
১লা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নামাজের পর পড়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দোয়া

শেয়ার করুন

নামাজ: আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের শ্রেষ্ঠ ইবাদত

নামাজ এমন একটি ইবাদত যা বান্দাকে তার প্রভুর সান্নিধ্যে নিয়ে যায়। অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় নামাজের সময় মানুষ আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে কাছাকাছি থাকে। যখন মুসল্লি তাকবিরে তাহরিমার মাধ্যমে নামাজ শুরু করে, তখন সে দুনিয়ার সবকিছু ভুলে গিয়ে নিজেকে আল্লাহর সামনে সমর্পণ করে। নামাজের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর স্মরণ, তাসবিহ ও তাহলীল দ্বারা পরিপূর্ণ।

নামাজের রুকু, সেজদা, বৈঠক— প্রতিটি অবস্থায় আল্লাহর প্রশংসা করা হয়, যা বান্দার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ককে আরও নিবিড় করে তোলে। নামাজের পরবর্তী সময়ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি দোয়া কবুলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত।

নামাজের পর দোয়া ও তাসবিহ

আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো:
“হে আল্লাহর রাসূল! কোন সময়ের দোয়া দ্রুত কবুল হয়?”
তিনি জবাব দিলেন:
“রাতের শেষ প্রহরে এবং ফরজ নামাজের পর।” (তিরমিজি, হাদিস: ৩৪৯৮)

রাসূলুল্লাহ (সা.) ফরজ নামাজের পর কিছু বিশেষ দোয়া ও তাসবিহ পাঠ করতেন, যা মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ।

রাসুল (সা.)-এর পড়া একটি দোয়া:

اَللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ، وَمِنْكَ السَّلاَمُ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالْإِكْرَامِ

উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা আংতাস্‌ সালামু ওয়া মিন্‌কাস্‌ সালাম, তাবারক্‌তা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম।

অর্থ:
“হে আল্লাহ! আপনিই শান্তিদাতা এবং আপনার থেকেই শান্তি আসে। হে মহিমাময় ও সম্মানিত সত্তা! আপনি বরকতময়।” (মুসলিম, হাদিস: ১২২১)

নামাজের পর পড়ার সুন্নত তাসবিহ ও দোয়া:

তিনবার ইস্তেগফার:
রাসুল (সা.) প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর “আস্তাগফিরুল্লাহ” তিনবার বলতেন। (মুসলিম, হাদিস: ১২২২)

তাসবিহ:

সুবহানাল্লাহ (৩৩ বার)

আলহামদুলিল্লাহ (৩৩ বার)

আল্লাহু আকবার (৩৩ বার)

লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির (১ বার)

➡ ফজিলত:
রাসূল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি এসব তাসবিহ পড়ে, তার গুনাহ যদি সমুদ্রের ফেনার মতোও হয়, তবুও আল্লাহ তা মাফ করে দেবেন।” (মুসলিম, হাদিস: ১২৪০)

আয়াতুল কুরসি:
➡ “যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ে, তার জন্য জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ব্যতীত আর কোনো বাধা থাকবে না।” (নাসায়ি, হাদিস: ৯৪৪৮; তাবারানি, হাদিস: ৭৮৩২)

‘আল্লাহুম্মা আজিরনী মিনান নার’ (৭ বার) ফজর ও মাগরিবের পর:
➡ “যে ব্যক্তি ফজর ও মাগরিবের পর এই দোয়া ৭ বার পড়বে, যদি সে দিন বা সে রাতে মারা যায়, তবে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন।” (আবু দাউদ, হাদিস: ৫০৮০)

সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস (প্রত্যেকটি ৩ বার) ফজর ও মাগরিবের পর:
➡ রাসুল (সা.) বলেন, “সকাল-সন্ধ্যায় এগুলো পাঠ করলে তোমার আর কিছুরই প্রয়োজন হবে না।”

নামাজ শুধু একটি আনুষ্ঠানিক ইবাদত নয়, বরং এটি আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলার সর্বোত্তম মাধ্যম। নামাজের পর দোয়া ও তাসবিহ পাঠ করা আমাদের জন্য অপরিসীম কল্যাণ ও বরকতের সুযোগ এনে দেয়। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে নামাজ ও এর পরে নিয়মিত দোয়া-তাসবিহ পাঠ করার তাওফিক দান করেন। আমিন!

 

শেয়ার করুন