
যেসব অভ্যাস আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর
আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাসই আমাদের স্বাস্থ্যকে গড়ে তুলতে পারে বা ধ্বংস করতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, নিয়মিত হাঁটা ও বিশ্রাম নেওয়ার মতো ভালো অভ্যাস আমাদের সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তবে কিছু বিষাক্ত অভ্যাস আমাদের অজান্তেই স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। প্রায় ৭০% মানুষের মধ্যে এসব অভ্যাসের কোনো না কোনোটি দেখা যায়। আসুন, জেনে নিই সেই ক্ষতিকর অভ্যাসগুলো—
১. ক্ষোভ পুষে রাখা
অন্যায় বা কষ্টের কারণে মনে ক্ষোভ ধরে রাখা স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। এটি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ক্ষমা ও ইতিবাচক মনোভাব মানসিক চাপ কমায় এবং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
২. ডেস্কে বসে খাওয়া
কাজের ব্যস্ততায় অনেকেই ডেস্কে বসেই দুপুরের খাবার খান। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, এভাবে খাওয়ার ফলে মনোযোগ বিভ্রান্ত হয়, যা অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয় এবং ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। তাই খাবার সময় কাজ থেকে বিরতি নেওয়া ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস বন্ধ রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
৩. অতিরিক্ত একাকিত্ব
কিছুটা একাকীত্ব উপভোগ্য হতে পারে, তবে দীর্ঘ সময় একা থাকা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এটি হতাশা, উদ্বেগ এবং এমনকি ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। সামাজিক যোগাযোগ বাড়ানো ও পরিবার-বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৪. দীর্ঘ সময় বসে থাকা
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকেন, তাদের হৃদরোগ, স্থূলতা, ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। দিনে ছয় ঘণ্টার বেশি বসে থাকলে অকাল মৃত্যুর সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয়ে যায়। তাই প্রতি ঘণ্টায় অন্তত পাঁচ মিনিট হাঁটাচলা বা স্ট্রেচিং করা উচিত।
৫. পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া
শরীরের ৬০% পানি দিয়ে তৈরি হওয়ায় পর্যাপ্ত পানি পান না করলে শরীর দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ে। এটি ত্বকের আর্দ্রতা কমায়, শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের হতে বাধা দেয় এবং হজমজনিত সমস্যা সৃষ্টি করে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীরের কার্যকারিতা উন্নত হয় ও সুস্থতা বজায় থাকে।
৬. রাতে দেরিতে খাওয়া
রাতে ঘুমানোর ঠিক আগে খাওয়া ওজন বৃদ্ধি ও বিপাকক্রিয়ার সমস্যা তৈরি করতে পারে। এটি অ্যাসিড রিফ্লাক্স ও হজমের সমস্যা বাড়িয়ে দেয় এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। বিশেষ করে, গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD) থাকলে রাতে দেরিতে খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
৭. অতিরিক্ত চিনি খাওয়া
বেশি চিনি খাওয়া ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, লিভার ও কিডনি সমস্যার অন্যতম কারণ। গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত চিনি মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ করে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, নারীদের দিনে ৬ চা-চামচ এবং পুরুষদের ৯ চা-চামচের বেশি চিনি খাওয়া উচিত নয়। অথচ গড়ে একজন প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিদিন প্রায় ১৭ চা-চামচ চিনি গ্রহণ করেন, যা সুস্থতার জন্য ক্ষতিকর।
সুস্থ থাকার জন্য করণীয়
- রাগ ও ক্ষোভ পুষে না রাখা, ক্ষমাশীল হওয়া।
- খাবারের সময় সম্পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া এবং নিয়ম মেনে খাওয়া।
- সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখা ও পরিবার-বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো।
- দীর্ঘক্ষণ বসে না থেকে নিয়মিত নড়াচড়া করা।
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা।
- রাতে ঘুমানোর আগে ভারী খাবার না খাওয়া।
- অতিরিক্ত চিনি এড়িয়ে চলা।
আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাসগুলোর ছোট ছোট পরিবর্তন সুস্থ ও সুখী জীবনযাপনে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।