
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার দাবিতে শিক্ষার্থীরা দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে মহাখালী-গুলশান লিংক রোড অবরোধ করে রেখেছেন। এতে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য ব্যাপক ভোগান্তি সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে অসুস্থ ও নারীদের জন্য পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠেছে। অনেকেই গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য গাড়ি না পেয়ে পায়ে হেঁটে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এ সময় কিছু পথচারী ও যানচালকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বাকবিতণ্ডাও দেখা গেছে।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টা ২০ মিনিটে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী সড়ক অবরোধ শুরু করেন। যদিও সকাল ১১টায় মহাখালীতে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল, তবে শুরুতে তেমন কোনো শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন না। পরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শতাধিক শিক্ষার্থী জড়ো হন এবং রাস্তার উভয় পাশ বাঁশ দিয়ে আটকে দেওয়া হয়। এর ফলে রিকশা, সিএনজি, মোটরসাইকেল ও বাস চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় কিছু মোটরসাইকেল চালকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডাও দেখা যায়। এ অবস্থায় অনেক পথচারীকে হেঁটে গন্তব্যের দিকে যেতে দেখা গেছে। তবে গাড়ি না থাকায় অসুস্থ ও নারীদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়ে।
মহাখালীর জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে পায়ে হেঁটে মহাখালী যাচ্ছিলেন মো. জয়নাল আবেদীন। তার স্ত্রী এক হাতে ব্যাগ এবং অন্য হাতে অসুস্থ স্বামীকে ধরে রাখতে ব্যস্ত ছিলেন। জয়নাল বলেন, “আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছিলাম। বের হয়ে দেখি কোনো রিকশা বা গাড়ি নেই। আমার বাড়ি কুড়িগ্রাম। সেজন্য মহাখালী বাস কাউন্টারে যাব। কোনো গাড়ি বা রিকশা না পেয়ে পায়ে হেঁটেই সেখানে যাচ্ছি।”
রবিউল ইসলাম নামের এক পথচারী বলেন, “কোনো কিছু হলেই রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা দরকার। মানুষজনের কষ্ট হচ্ছে অনেক। মানুষকে কষ্ট দিয়ে কী লাভ? দ্রুত এই বিষয়ে একটি সমাধান হওয়া উচিত।”
অন্যদিকে, শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। নূর মোহাম্মদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, “দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন চলবে। সরকার এবং প্রশাসন আমাদের সঙ্গে দ্বিচারিতা করেছে। একদিকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়ে অন্যদিকে আবার নাকচ করে দিয়েছেন। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী ৬ দিন ধরে আমরণ অনশন করছেন। এগুলোর দাম সরকারের কাছে নেই।”
উল্লেখ্য, সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে বেশ কয়েক মাস ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। এই দাবিতে মিছিল, সড়ক ও রেলপথ অবরোধ, স্মারকলিপি প্রদান, ক্লাস বর্জনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করা হয়। তবে সম্প্রতি এ বিষয়ে ইতিবাচক কোনো সাড়া না পেয়ে গত বুধবার (২৯ জানুয়ারি) থেকে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন।
গত রাতে তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ৩ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়েছে। দাবিগুলো হলো:
১. তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়কে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে হবে।
২. শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন গঠন প্রক্রিয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর আইন উপদেষ্টার চাপ সৃষ্টির ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টির দায়ভার মাথায় নিয়ে আইন উপদেষ্টাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।