১৬ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার
৩১শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রাণী থেকে মানুষের রোগ : মহামারির উৎস ও বিস্তার

শেয়ার করুন

বিভিন্ন সংক্রামক রোগ প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, যা সময়ের সাথে সাথে মহামারিতে রূপ নিতে পারে। ইতিহাসে কিছু রোগের প্রভাব বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে, যেমন HIV/AIDS, ইবোলা, সার্স, মার্স, এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা। এই রোগগুলো মানুষের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলেছে, এবং কিছু রোগ প্রাণী থেকে মানবদেহে সংক্রমিত হয়ে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে, যার ফলে মহামারি সৃষ্টি হয়েছে।

হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস (HIV)/এইডস (AIDS): HIV প্রথমে আফ্রিকার বানরের দেহে ছিল এবং বানরের মাংস খাওয়ার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। ১৯৬০ এর দশকে এটি মানবদেহে প্রবেশ করে এবং HIV নামে পরিচিত হয়, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। এর ফলে এইডস (AIDS) রোগের সৃষ্টি হয়, যা সংক্রামিত ব্যক্তির শরীরে নানা ধরনের সংক্রমণ, ক্যান্সার, এবং অন্যান্য রোগ ছড়িয়ে দেয়। বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩৬ মিলিয়ন মানুষ এইচআইভি/এইডসের কারণে মারা গেছে এবং প্রতি বছর ১.৭ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হয়।

ইবোলা (Ebola): ইবোলা ভাইরাস প্রথমে বাদুড়, বানর, এবং অন্যান্য প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭৬ সালে প্রথম আফ্রিকার সুদানে এবং কঙ্গোতে ইবোলা ভাইরাসের মহামারি দেখা দেয়। এটি আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের তরল (যেমন রক্ত, লালা) থেকে ছড়ায় এবং শারীরিক সংস্পর্শে খুব দ্রুত সংক্রমিত হতে পারে। ২০১৪-২০১৬ সালের পশ্চিম আফ্রিকার ইবোলা মহামারিতে প্রায় ১১,০০০ মানুষ মারা যায়।

সার্স (SARS): সার্স ভাইরাস প্রথমে বাদুড় থেকে সিভেট (এক ধরনের মাংসাশী প্রাণী) এবং অন্যান্য পশুদের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ২০০২ সালে চীনে এটি প্রথম শনাক্ত হয় এবং শ্বাসকষ্ট, জ্বর, কাশি, মাথাব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। সার্স মহামারিতে প্রায় ৮০০ জনের মৃত্যু ঘটেছিল।

মার্স (MERS): মার্স ভাইরাস প্রথমে উটের মধ্যে ছিল এবং পরে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ২০১২ সালে মধ্যপ্রাচ্যে এটি শনাক্ত হয়। মার্সে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে শ্বাসকষ্ট, জ্বর, কাশি, মাংসপেশিতে ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়, এবং মৃত্যুহার প্রায় ৩৫%।

ইনফ্লুয়েঞ্জা (Influenza): ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস মূলত পাখি ও শূকরের মধ্যে থাকে এবং ২০০৯ সালের H1N1 ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারি শূকর থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এটি শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা সৃষ্টি করে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, H1N1 মহামারিতে ২০০৯ সালে প্রায় ২০,০০০-৫০,০০০ লোক মারা যায়।

প্রাণীবাহিত রোগগুলো পৃথিবীজুড়ে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এবং মহামারি সৃষ্টি করেছে। প্লেগ, ম্যালেরিয়া, রাবিস, ডেঙ্গু ইত্যাদি রোগও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এসব রোগের বিস্তার প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতীয় পর্যায়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। জনগণের সচেতনতা, স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন এবং দ্রুত চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তুললে এসব রোগের বিস্তার অনেকটাই কমানো সম্ভব।

ড. কবিরুল বাশার, অধ্যাপক, গবেষক, প্রাণীবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

শেয়ার করুন