
ইসরা ও মেরাজ বা রাসূল (সা.)-এর ঊর্ধ্বগমন একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা যা মানুষের স্বাভাবিক চোখে অসম্ভব মনে হতে পারে। এক রাতে একজন মানুষের জন্য ফিলিস্তিনের বায়তুল মুকাদ্দাস, সাত আসমান, জান্নাত ও জাহান্নাম ঘুরে আসা যে কোনো সাধারন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় হাবীব (সা.)-কে নিজ কুদরতে সবকিছু ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন এবং তাঁকে অন্য সকল নবীর মধ্যে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করেছেন।
রাসূল (সা.) যখন মেরাজের সফর শেষে মক্কায় ফিরে এসে এই অভিজ্ঞতার কথা বললেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই কুরায়শরা তা অবিশ্বাস করল। আবু জাহেল, আবু লাহাব, উতবা শায়বা প্রমুখ কুরায়শ নেতারা তাতে ঠাট্টা ও বিদ্রুপ শুরু করল। অনেক মুসলিমও এ ঘটনা শুনে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছিলেন।
মুশরিকরা বলেছিল, “আমরা দ্রুতগতির বাহন ব্যবহার করেও এক মাসে মসজিদুল আকসায় পৌঁছাতে পারি, আর তুমি একরাতে এত কিছু ভ্রমণ করে এসেছো! তোমার কথা কে বিশ্বাস করবে, তুমি কি কোনো প্রমাণ দিতে পারবে?”
কুরায়শরা মেরাজের ঘটনা বিশ্বাস করতে না পেরে, তারা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে গিয়ে বলেছিল, “শুনেছো! মুহাম্মদ এসব কী বলছে! সে নাকি একরাতে এত কিছু ভ্রমণ করে ফেলেছে!”
এটা শুনে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছিলেন, “যদি মুহাম্মদ (সা.) নিজেই এসব কথা বলছেন, তবে আমি বিনা বাক্যব্যয়ে তার কথাগুলো বিশ্বাস করি।”
কুরায়শরা মেরাজের সত্যতা যাচাই করার জন্য আরো একবার রাসূল (সা.)-এর কাছে প্রশ্ন করল। তারা জানতে চাইল, “বায়তুল মুকাদ্দাস কোন দিকে অবস্থিত, তার দেয়াল কেমন, জানালা কয়টি, দরজা কয়টি?”
এ জাতীয় প্রশ্ন সাধারণত কোনো মানুষের পক্ষে উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়, কারণ আল্লাহর রাসূল (সা.) বায়তুল মুকাদ্দাসের দরজা-জানালা গুনতে যাননি, এটি ছিল আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের এক ভ্রমণ। তবে আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের মাধ্যমে রাসূল (সা.)-এর সামনে বায়তুল মুকাদ্দাসের পুরো বিবরণ তুলে ধরেন। রাসূল (সা.) সেই বর্ণনা শুনে কুরায়শদের সকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেন, যেন তিনি সরাসরি বায়তুল মুকাদ্দাসে গিয়েছিলেন।
উত্তর শোনার পর, এক ব্যক্তি বললেন, “আপনি সঠিক বলেছেন, বায়তুল মুকাদ্দাসের সঠিক বিবরণ তুলে ধরেছেন।”
এসময় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, যিনি পূর্বে বায়তুল মুকাদ্দাস দেখেছিলেন, বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল! আপনি চরম সত্যবাদী। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি আল্লাহর রাসূল।”
(তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন, ৫ম-খণ্ড, ৪৩৩, তাফসিরে ইবনে কাসির, ১৩-খণ্ড, ২৬৭)