
রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুলে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খৎনার জন্য অজ্ঞান করা শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় দুই চিকিৎসক ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে একটি তদন্ত কমিটি। এই কমিটি আয়ানের পিতামাতাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে এবং অনুমোদনহীন হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।
২৫ জানুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে হাইকোর্টে পাঠানো প্রতিবেদনটি হাতে এসেছে। ২৬ জানুয়ারি হাইকোর্টে এই প্রতিবেদন নিয়ে শুনানি হবে। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চে শুনানি অনুষ্ঠিত হতে পারে।
তদন্ত কমিটির সুপারিশসমূহ:
১. ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, যেখানে আয়ান আহমেদের মৃত্যু হয়েছে, তারা ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে। ক্ষতিপূরণের একটি অংশ আয়ানের পিতামাতাকে এবং অন্য অংশ দিয়ে দুস্থ শিশুদের জন্য একটি হাসপাতাল নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে।
২. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা এবং আয়ানের মৃত্যুর জন্য ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
৩. চিকিৎসক তাসনুভা মাহজাবীন ও অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট সৈয়দ সাব্বির আহম্মদকে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) অনুযায়ী শাস্তির আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে।
৪. রোগীর সম্মতিপত্রটি স্পষ্ট ও সহজবোধ্যভাবে লিখতে হবে, যাতে অভিভাবকরা তা বুঝতে পারেন এবং স্বাক্ষর করতে পারেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একটি ইউনিফর্ম সম্মতিপত্র তৈরির সুপারিশ করা হয়েছে।
৫. অনুমোদনহীন হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো চিহ্নিত করে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটি আরও কিছু সুপারিশ করেছে, যার মধ্যে:
১. স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতির জন্য আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনে আইন সংস্কারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
২. রোগীকে এক পর্যায়ের চিকিৎসক থেকে আরেক পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে রেফার করার পদ্ধতি গ্রহণ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
৩. অপরিকল্পিত এবং মানহীন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৪. অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সঠিক নির্দেশনা মেনে চলা নিশ্চিত করা।
৫. বিএমডিসি কর্তৃক নিবন্ধিত চিকিৎসক ছাড়া চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা।
৬. স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
৭. চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রণোদনা প্রদান এবং গুড ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস উৎসাহিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় একটি নতুন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল, যেটি এই সুপারিশগুলো করেছে।