১৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার
১লা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১০ বছর বয়সী নাগরিকদের এনআইডি দেওয়ার সুপারিশ

শেয়ার করুন

১০ বছর বয়সী নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়ার সুপারিশ

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ১০ বছর বা তার বেশি বয়সী নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়ার সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি, কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে নেওয়ার আইনটি জরুরি ভিত্তিতে বাতিল করার প্রস্তাব দিয়েছে।

কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের সুপারিশসমূহ জমা দিয়েছে। এতে উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো হলো:

জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবস্থাপনা:

১. জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন ২০২৩ বাতিল: এই আইনের মাধ্যমে এনআইডি ব্যবস্থাপনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তরিত হয়েছিল, যা জরুরি ভিত্তিতে বাতিল করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

২. জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন ২০১০ পুনঃপ্রবর্তন: এই আইনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করে এটি পুনর্বহাল করার সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে এটি নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রস্তাবিত আধুনিক আইডেন্টিটি সিস্টেমকে আইনি ভিত্তি প্রদান করতে পারে। এর মাধ্যমে নাগরিকরা তাদের আইডেন্টিটি তথ্যের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পাবে।

৩. এসওপি পর্যালোচনা ও জনবান্ধব করা: জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত বিদ্যমান স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) পর্যালোচনা করে, সকল অব্যবস্থাপনা, হয়রানি এবং অনিয়ম দূর করে কার্যক্রমটি জনবান্ধব করা।

৪. হালনাগাদ এনআইডি স্মার্টকার্ড প্রদান: ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত সকল নাগরিককে হালনাগাদ ছবিযুক্ত এনআইডি স্মার্টকার্ড প্রদান করার জন্য প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করার সুপারিশ।

৫. এনআইডি তথ্য ফাঁসের তদন্ত: বাংলাদেশে এনআইডি তথ্য ফাঁসের ঘটনা এবং ওয়েবসাইট ও ম্যাসেজিং প্ল্যাটফর্ম থেকে এসব তথ্য বিক্রির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে, এর সত্যতা নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ এবং এই তথ্য ফাঁসের কারণ ও পরিণতি নির্ধারণ করতে স্বাধীন তদন্তের প্রস্তাব।

৬. ১০ বছরের শিশুদের জন্য এনআইডি কার্যক্রম: বর্তমানে ১৬ বছর বা তার বেশি বয়সী নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে ১০ বছরের শিশুদের জন্য এনআইডি নিবন্ধন কার্যক্রম চালু করার সুপারিশ।

৭. জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংস্থা প্রতিষ্ঠা: দেশের বৃহত্তম জাতীয় তথ্য ভাণ্ডারের সুরক্ষা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন সংবিধিবদ্ধ সংস্থা গঠন করার প্রস্তাব।

৮. এনআইডি সিস্টেম হস্তান্তর: বর্তমান এনআইডি সিস্টেম, ডাটা সেন্টার, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার এবং ডাটাবেস ক্রেডেনশিয়ালস ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান থেকে প্রস্তাবিত জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংস্থার কাছে হস্তান্তরের ব্যবস্থা।

আইডেন্টিটি এবং আইডেন্টিটি সিস্টেম:

১. ডিজিটাল এনআইডি রূপান্তর: জাতীয় পরিচয়পত্রকে ডিজিটাল (ভার্চুয়াল) ভার্সনে রূপান্তরের জন্য প্রস্তাবিত Self-Sovereign Identity (SSI) ভিত্তিক আইডেন্টিটি সিস্টেম বাস্তবায়ন।

২. SSI-ভিত্তিক সিস্টেম বাস্তবায়ন: SSI প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রস্তাবিত আইডেন্টিটি সিস্টেমের ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট, সঙ্গে প্রাসঙ্গিক ট্রাস্ট ও গভার্নেন্স ফ্রেমওয়ার্ক স্থাপন।

৩. SSI ওয়ালেট ডেভেলপমেন্ট: স্মার্টফোনের জন্য SSI ওয়ালেট তৈরি করা, যার মাধ্যমে নাগরিকরা তাদের আইডেন্টিটি ডেটা নিরাপদভাবে ব্যবহারের সুযোগ পাবেন।

৪. নিরাপত্তা অডিট: প্রস্তাবিত সিস্টেম এবং ওয়ালেটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত নিরাপত্তা অডিট প্রতিষ্ঠান দ্বারা নিরাপত্তা অডিট করা।

৫. সরকারি ও বেসরকারি পরিষেবাগুলোর রূপান্তর: SSI-ভিত্তিক সিস্টেম প্রস্তুত হলে, সরকারি এবং বেসরকারি অনলাইন পরিষেবাগুলোর সিকিউরিটি এবং প্রাইভেসি ফিচারগুলি ব্যবহারের জন্য রূপান্তরিত করা।

৬. সিস্টেম টেস্টিং: প্রস্তাবিত সিস্টেম এবং এর উপাদানগুলোকে সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা নিশ্চিত করতে ব্যাপক পরীক্ষা করা।

৭. ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন: একটি কমপ্রিহেনসিভ ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা এবং গোপনীয়তা আইন প্রণয়ন করার প্রস্তাব, যা ভবিষ্যতে পরিচয় তথ্যের অপব্যবহার রোধ করবে।

এই সুপারিশগুলো নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষে অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার কার্যক্রম শুরু করবে।

 

শেয়ার করুন