
দেশীয় ফ্রিজ, এসি ও মোটরসাইকেল শিল্পে কর বৃদ্ধি: দাম বাড়ার আশঙ্কা
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে দেশীয় ফ্রিজ, রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার, মোটরসাইকেল, এবং কম্প্রেসার তৈরির শিল্পে করপোরেট কর হার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তের কারণে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
করের হার বৃদ্ধি ও প্রজ্ঞাপনের বিবরণ
এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে:
দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় থেকে করের হার ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো।
২০২৫-২৬ করবর্ষ থেকে এই নিয়ম কার্যকর হবে এবং ২০৩২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
প্রজ্ঞাপনে বেশ কিছু শর্তও আরোপ করা হয়েছে, যেমন:
1. শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোম্পানি আইন, ১৯৯৪-এর অধীনে নিবন্ধিত হতে হবে।
2. প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব মোল্ড ও ডাইস তৈরির ক্ষমতা থাকতে হবে।
3. সক্রিয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্টসহ বিশেষ কিছু উৎপাদন ক্ষমতা থাকা আবশ্যক।
4. প্রতিষ্ঠানটি বিদ্যমান ব্যবসা পুনর্গঠনের মাধ্যমে গঠিত হতে পারবে না।
এনবিআর জানিয়েছে, শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে অনুমোদন বাতিল হতে পারে।
আগের কর সুবিধা এবং বর্তমান পরিবর্তন
২০০৯ সাল থেকে এসব শিল্পে করের হার হ্রাস করা হয়েছিল, যা শুরুতে ছিল মাত্র ৫ শতাংশ।
২০২১ সালের একটি আদেশ অনুযায়ী, এসব শিল্প ২০৩২ সাল পর্যন্ত ১০ শতাংশ কর হার উপভোগ করছিল।
বর্তমানে কর সুবিধা প্রত্যাহার করে ২০ শতাংশ কর হার নির্ধারণ করা হয়েছে।
কেন কর বৃদ্ধি করা হলো?
এনবিআরের একজন কর্মকর্তা বলেছেন:
এসব শিল্পে বিপুল কর ও ভ্যাট ছাড় দিয়ে দেশীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করা হয়েছিল।
এখন দেশীয় শিল্প অনেকটাই স্বাবলম্বী হয়েছে, তাই করের সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর সুবিধা না দিয়েও কার্যকর রাখা সম্ভব।
ক্ষতির আশঙ্কা
খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অতিরিক্ত কর আরোপের ফলে উদীয়মান শিল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ:
ফ্রিজ ও এসি খাত: ওয়ালটন দেশীয় ফ্রিজ ও এসির বাজারে শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে। এই খাতে দাম বাড়লে স্থানীয় বাজারে চাহিদা কমতে পারে।
মোটরসাইকেল খাত: রানার, টিভিএস, হিরো, এবং হোন্ডার মতো কোম্পানিগুলো দেশীয় উৎপাদনে বিনিয়োগ করছে। কর বৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ বাড়লে পণ্যের দামও বাড়তে পারে।
ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর প্রভাব পড়তে পারে, যা আমদানি নির্ভরতা আবারও বাড়াতে পারে।
সমাধানের পথ
1. কর হার পর্যায়ক্রমে বাড়ানো: সরাসরি ১০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ না বাড়িয়ে ধাপে ধাপে কর বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
2. উদীয়মান শিল্পে বিশেষ ছাড়: যারা নতুন বিনিয়োগ করছে তাদের জন্য বিশেষ কর ছাড় রাখা প্রয়োজন।
3. ভর্তুকি ও প্রণোদনা: রপ্তানি বৃদ্ধি এবং উদীয়মান বাজারে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা দিতে ভর্তুকি বা প্রণোদনা প্রদান।
4. বাজার স্থিতিশীল রাখা: কর বৃদ্ধির ফলে পণ্যের দাম যেন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে না যায়, তা নিশ্চিত করা।
দেশীয় শিল্পে কর বৃদ্ধি বর্তমান সরকারের একটি কৌশলগত পদক্ষেপ, যা দীর্ঘমেয়াদে রাজস্ব বৃদ্ধি ও স্বাবলম্বিতা আনতে পারে। তবে এই সিদ্ধান্তের ফলে উৎপাদন খরচ ও পণ্যমূল্য বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সঠিক পরিকল্পনা এবং প্রণোদনার মাধ্যমে এই শিল্পগুলোকে টিকিয়ে রাখা ও জনগণের উপর প্রভাব কমানো এখন সময়ের দাবি।