
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায় আরও ৪৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে নিহতের মোট সংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার ৯০০ জনে পৌঁছেছে। এছাড়া ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলা এই হামলায় আহত হয়েছেন লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি। বুধবার (৮ জানুয়ারি) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি জানায়, মঙ্গলবার গাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪৯ জন নিহত হন। এর মধ্যে আল-মাওয়াসির তথাকথিত “নিরাপদ অঞ্চল”-এ পাঁচ শিশু এবং জাবালিয়ায় চালানো হামলায় আটজন নিহত হয়েছেন। আল জাজিরা আরও জানায়, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় তাদের আক্রমণ আরও জোরদার করছে, যার ফলে আবাসিক ভবন ও বেসামরিক অবকাঠামোর ব্যাপক ধ্বংস সাধিত হচ্ছে।
মানবিক সংকট আরও গভীর
ত্রাণবাহী গাড়ির ওপর ইসরায়েলের আক্রমণ এবং জ্বালানি ট্যাংকসহ সাহায্যবাহী গাড়িতে পদ্ধতিগত লুটপাটের কারণে গাজায় মানবিক সংকট দিন দিন বাড়ছে। ফিলিস্তিনি গ্যাংদের মাধ্যমে এসব লুটপাট সংঘটিত হলেও, তারা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে সুরক্ষা পাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গাজার ইউরোপীয় হাসপাতাল সতর্ক করেছে, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের জ্বালানি শেষ হয়ে যাবে। একই অবস্থা আল-আকসা হাসপাতালের, যেখানে জ্বালানি সংকটে বিদ্যুৎ বন্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
মৃত্যু ও ধ্বংসের ভয়াবহ চিত্র
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় মোট ৪৫,৮৮৫ জন নিহত এবং অন্তত ১ লাখ ৯ হাজার ১৯৬ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও প্রায় ১০ হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের প্রস্তাব উপেক্ষিত
যুদ্ধবিরতির দাবিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা শুরু করে। এর ফলে হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ধ্বংস হয়েছে।
বাস্তুচ্যুতি ও মানবিক বিপর্যয়
ইসরায়েলি আগ্রাসনের ফলে প্রায় ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। জাতিসংঘের মতে, গাজার ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত এবং খাদ্য, পানি ও ওষুধের তীব্র সংকটে ভুগছেন। অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
গণহত্যার অভিযোগ
গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা ইসরায়েলের এই আক্রমণ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তীব্র নিন্দার মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।