
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দেশের রাজনীতিতে বাড়ছে নির্বাচনী তৎপরতা। বিভিন্ন দল একে একে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করছে; পাশাপাশি চলছে জোট আলোচনা ও আসন সমঝোতার উদ্যোগ। এমন পরিস্থিতিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে উঠে আসা গণঅধিকার পরিষদও সক্রিয়ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলটি জানায়, তারা এককভাবেই ৩০০ আসনে লড়তে চায়, যদিও সম্ভাব্য জোট নিয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনাও চলছে। তবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাই একক নির্বাচন; তারা মনে করেন, নিজস্ব প্রতীক ও পরিচয়ে লড়াই করলেই দলের স্বতন্ত্র পরিচিতি আরও শক্ত হবে। এই চাওয়া বিবেচনায় রেখে তপশিল ঘোষণার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে দলীয় উচ্চপর্যায়।
গত জুলাইয়ে ৩৬ আসনসহ প্রায় ৫০টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে গণঅধিকার পরিষদ। চলতি সপ্তাহে আরও অন্তত ১০০ আসনের তালিকা প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে। মুখপাত্র হাসান আল মামুন জানান, তপশিলের আগেই ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করার লক্ষ্যে তারা অগ্রসর হচ্ছে।
সাম্প্রতিক এক সভায় তৃণমূলের নেতারা স্পষ্ট করে একক নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে মত দেন। তাদের মতে, বিভিন্ন দলের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পর চাঁদাবাজি-দখলদারির অভিযোগ থাকায় জোটে গেলে সেই দায় ভাগ করে নিতে হতে পারে। গণঅধিকার পরিষদ তরুণ নেতৃত্বের একটি স্বচ্ছ ইমেজের দল—এমনটাই জানিয়ে নেতারা বলেন, ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে দলকে স্বাধীন অবস্থানে এগোতে হবে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় আছে—বিএনপি সম্ভবত গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর (পটুয়াখালী-৩) এবং সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানের (ঝিনাইদহ-২) আসনে প্রার্থী দেয়নি। ফলে শেষ মুহূর্তে জোট বা আসন সমঝোতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। একই ধরনের পরিস্থিতি দেখা গেছে ঠাকুরগাঁও-২ আসনেও, যেখানে গণঅধিকারের সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন।
সূত্র বলছে, বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদের মধ্যে একাধিক বৈঠক হয়েছে; জামায়াতের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। তবে দলটির ভেতরেই মতভেদ রয়েছে—অনেকে মনে করেন, বিএনপির সঙ্গে জোটে গেলে আসন ভাগাভাগি নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে, বিশেষ করে স্থানীয় পর্যায়ে কিছু স্থানে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। পটুয়াখালীর গলাচিপায় নুরকে অবরুদ্ধ করা এবং সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ঘটনা তৃণমূল উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
দলের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা বলেন, কয়েকটি আসনের জন্য জোট করলে দল নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। বরং এককভাবে লড়লে বেশ কিছু আসনে জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক এবং যুগপৎ আন্দোলনের অংশীদারিত্ব থাকায় আলোচনা চলছে। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তাদের প্রার্থীদের মতামতও শোনা হয়েছে, এবং উচ্চতর পরিষদে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সভাপতি নুরুল হক নুর জানান, জুলাই সনদ আদেশের পর তারা নতুন করে ভাবছেন। সরাসরি জোটে না গিয়ে কিছু আসনে সমঝোতার পথ থাকতে পারে। একইসঙ্গে উচ্চকক্ষে পিআর ব্যবস্থা থাকায় ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। তবে তপশিল ঘোষণার পরই জোট বা আসন ভাগাভাগি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সিএনআই/২৫