।।শেখ শাহরিয়ার।জেলা প্রতিনিধি (খুলনা)।।
খুলনা মহানগরীতে মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে দুই শিশুসহ চারজনকে গুলি ও গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রোববার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে সোনাডাঙ্গা ও লবণচরা থানার দুটি পৃথক স্থানে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটে। ঘটনাগুলোয় পুরো শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
করিমনগরে আলাউদ্দিনকে গুলি ও জবাই
সন্ধ্যা ৭টার দিকে সোনাডাঙ্গা থানার করিমনগর এলাকায় সৈয়দ আলী হোসেন প্রাইমারি স্কুলের পাশে নিজ ভাড়া বাসায় আলাউদ্দিন মৃধা (৩৫)–কে তার স্ত্রীর সামনে গুলি ও গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি মনা মুন্সির ছেলে এবং পেশায় ডিমের ব্যবসায়ী।
নিহতের স্ত্রী নারগিস জানান, পূর্বশত্রুতার জের ধরেই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তিনি বলেন,
“আমার স্বামী ঘরের দরজায় বসে ছিল। হঠাৎ ৩টি মোটরসাইকেলে ৬ জন আসে। একজন ধরে রাখে, আরেকজন গুলি করে। পরে আরেকজন জবাই করে চলে যায়। আমি চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি।”
সোনাডাঙ্গা মডেল থানার এসআই সুমন হাওলাদার বলেন, বাড়ির বারান্দার সিঁড়িতে বসে থাকার সময় দুর্বৃত্তরা আলাউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা গুলি ছোড়ে—বুকে ও পেটে দুটি গুলি লাগে। পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
লবণচরায় নানি ও দুই নাতিকে হত্যা
এর ঠিক কিছুক্ষণ পর রাত ৮টার দিকে লবণচরা থানাধীন মুক্তা কমিশনার কালভার্ট সংলগ্ন দরবেশ গলি এলাকায় আরেকটি নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটে। সেখানে নিজ বাসার ভেতর নানি মহিদুন্নেসা (৫৫), নাতি মুস্তাকিম (৮) ও নাতনি ফাতিহা (৬)-এর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
শিশু দুটির বাবা-মা চাকরি করেন। সকালে তারা সন্তানদের নানির কাছে রেখে কাজে যান। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে প্রতিবেশীদের সহায়তায় দরজা ভাঙেন। ঘরে নানির মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন।
পরে ঘরের পাশের মুরগির খামার থেকে দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। শিশুদের গলাতেও ধারালো অস্ত্রের জখম দেখা গেছে।
লবণচরা থানার ওসি সানওয়ার হুসাইন মাসুম বলেন,
“তিনজনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঘটনাটি রহস্যজনক। ধারণা করা হচ্ছে, সন্ধ্যার আগেই তাদের হত্যা করা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।”
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) সুদর্শন কুমার রায় বলেন,
“করিমনগরের হত্যার ক্রাইম সিন পরিদর্শনে যাওয়ার সময়ই জিন্নাপাড়ায় ট্রিপল মার্ডারের খবর পাই। দুটি ঘটনাই খুব গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।”
মাত্র ১ ঘণ্টার ব্যবধানে চারজনকে হত্যার ঘটনায় সোনাডাঙ্গা ও লবণচরা এলাকায় চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। দুটি হত্যার মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কি না—তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে পুলিশ সবদিক বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে।
সিএনআই/২৫